ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
গাজীপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরিফুল ইসলামের আদালতে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে তোলা হয়।
শুনানি শেষে বিচারক রফিকুলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর দুপুরে তাকে জেলা কারাগারে নেয়া হয়।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রবিরোধী, উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোণা থেকে আটক করে র্যাব।
নেত্রকোণার পূর্বধলার লেডির কান্দার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয় বলে বুধবার দুপুরে নিউজবাংলাকে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ইমরান খান।
এরপর গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার নামে মামলা করেছে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদ
মাদানিকে নেত্রকোণা থেকে আটক করার পর হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।
পরে তাকে উদ্ধৃত করে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘কী আর বলমু স্যার, জোশের কারণে অনেক সময় হুঁশ থাকে না। ওয়াজের মঞ্চে উঠলে শরীরে একটা জোশ চলে আসে। তখন আর নিজেরে ধরে রাখা যায় না। অনেক কিছু না বুঝেই বলে ফেলছি। আর এমন হবে না। এবারের মতো আমারে মাফ করে দেন।’
নিউজবাংলাকে টেলিফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম।
খর্বকায় ও শিশুতোষ কণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় রফিকুল ইসলামকে অনেকে ‘শিশুবক্তা’ বলে মনে করলেও তিনি নিজে দাবি করেছেন, তিনি মোটেও শিশু নন। তার বয়স ২৬ বছর।
এর আগে ২৫ মার্চ মতিঝিল এলাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী মিছিল ও ভাঙচুরের সময় রফিকুলকে আটক করেছিল রমনা থানার পুলিশ। সেখানেও তিনি মৌখিক আশ্বাস দিয়েছিলেন, আর এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।
সে কথা না রাখার কারণ জানতে চাইলে রফিকুল র্যাবকে বলেন, পুলিশের আটকের বিষয়টি তিনি ‘সিরিয়াসলি’ নেননি। ভেবেছিলেন, জনপ্রিয়তার কারণে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে না।
রফিকুল নেত্রকোণার একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ঢাকার বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও কোরআন চর্চার চেয়ে তার জনপ্রিয়তার দিকে ঝোঁক বেশি বলে মনে করেন জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকা র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা।
তারা নিউজবাংলাকে বলেন, ওয়াজে তার আলোচনার মূল বিষয় থাকে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু। যেকোনো ওয়াজে তার উদ্দেশ্যই থাকে উপস্থিত মুসল্লিদের উত্তেজিত করে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করা।
জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল ইসলামের একটি কথিত বিয়ের বিষয়েও জানতে পারে র্যাব। খায়রুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি তার এক আত্মীয়কে গোপনে কলেমা পড়ে বিয়ে করেন। তাদের এই বিয়ের কোনো কাবিননামা করা হয়নি। দুই পরিবারের কেউই এই বিয়ের কথা জানতেন না।
র্যাবের ভাষ্য, মামুনুল হকের রিসোর্ট-কাণ্ডের পর ভীত হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে রফিকুল ইসলাম মাদানি তার মা ও পরিবারের স্বজনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ফুলপুরের রহিমগঞ্জে ওই নারীর বাড়িতে যান। কিন্তু মাদানিকে পছন্দ না হওয়ায় ওই নারীর বাবা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।