নারায়ণগঞ্জে রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধের জেরে সেখানে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে সংগঠনটির আরও তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আর হেফাজতের ডাকা হরতালের দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও একজনকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, সোনারগাঁয়ে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের মামলায় মো. রাজু, ইমরান হাসান ও আবু রায়হান প্রধান নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর হরতালের দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড় থেকে শিমরাইল পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা এবং হত্যার চেষ্টা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা, আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সহিংসতার অভিযোগ করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফিরোজ মিয়া নামের একজনকে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার সবাই হেফাজতের কর্মী, তাদের বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে।
এর আগে রিসোর্টে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে মো. মোস্তফা নামে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে সোনারগাঁয়ের বাংলাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মোস্তফা তিনটি মামলার আসামি। দুটি নাশকতার মামলা, আরেকটি সাংবাদিকদের ওপর হামলার মামলা। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, মোস্তফা হেফাজতের এক নেতা। তবে তার পদ জানা যায়নি।
হেফাজতের ডাকা হরতালে তাণ্ডবের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেনকে।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বুধবার নিশ্চিত করেছে র্যাব।
র্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার আসামি ইকবাল।
তিনি সিটির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টের একটি কক্ষে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান নেয়া হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজনের প্রশ্নের মুখে হেফাজত নেতা তার সঙ্গীনিকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন। তিনি বলেন, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী, নাম আমেনা তইয়্যেবা; বাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম।
তবে সেই নারী জানিয়েছেন তার নাম জান্নাত আরা, বাবার নাম অলিয়র, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
এ ঘটনায় অবরুদ্ধ মামুনুলকে উদ্ধার করতে কয়েক শ হেফাজত কর্মী ওই রিসোর্টে হামলা করেন। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পর পথে পথে তার কর্মী-সমর্থকরা হামলা ও ভাঙচুর করেন।
এসপি মোস্তাফিজুর বুধবার জানান, সোনারগাঁয়ে ভাঙচুর, সহিংসতা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে সোনারগাঁ থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
এই মামলায় মামুনুল হকসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আড়াই থেকে তিন শ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরেকটি মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিকের ওপর হামলার মামলাও হয়েছে থানায়।