গাইবান্ধায় রোববারের কালবৈশাখীতে পাঁচ উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ জন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া গেছে এই তথ্য।
সোমবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। অন্য পাঁচ জেলা এখনও বিদ্যুৎহীন।
জেলায় রোববার বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় ঝড়। এতে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল।
জেলা প্রশাসনের তথ্যে, ঝড়ের তাণ্ডবে সদর উপজেলায় ৪ জন, পলাশবাড়ীতে ৩ জন, ফুলছড়ীতে ২ জন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ মৃত্যুর খবর আসে সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আরজিনা বেগম, রিফাইতপুর সরকারতারি গ্রামের জোৎসা রানী ও কিশামত মালিবাড়ি গ্রামের সাহেরা বেগমের। সদর হাসপাতাল থেকে রাতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে রাতে সদর হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় মারা যায় পাঁচ বছরের মনির মিয়া। এরা সবাই গাছচাপায় নিহত হয়েছেন।
পলাশবাড়ী উপজেলায় গাছচাপায় নিহত হয়েছেন বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম, মোস্তফাপুর গ্রামের গফফার মিয়া ও মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের মমতা বেগমের।
ফুলছড়ী উপজেলার কাতলামারি গ্রামের শিমুলি আকতারের মৃত্যু হয়েছে গাছচাপায়। আর এরেন্ডাবাড়ির ডাকাতিয়ার চরে ঝড়ে অটোরিকশা উল্টে নিহত হয়েছেন চালক হাফেজ উদ্দিন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া দয়াপাড়া গ্রামের ময়না বেগমও গাছচাপায় মারা গেছেন।
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।
ঝড়-আতঙ্কে সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মুদি দোকানি আবদুস সালাম সর্দার মারা গেছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে। তার ভাতিজা রানু সর্দার নিউজবাংলাকে জানান, রোববার বিকালে সালাম বাড়ির পাশে নিজ দোকানে অবস্থান করছিলেন। ঝড় শুরু হলে তিনি দোকান বন্ধ করে দৌড়ে বাড়িতে যান। এ সময় তার ঘরের টিনের চালা বাতাসে উড়ে যায়। উঠানে থাকা গাছের ডালপালা ভেঙে ঘরের ওপর পড়তে দেখে আতঙ্কে তার মৃত্যু হয়।
তবে সালামের নাম প্রশাসনের দেয়া মৃতের তালিকায় নেই।
ঝড়ে রোববার বিকেল থেকেই বিদ্যুৎহীন ছিল পুরো জেলা। গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তারে পড়েছে কোথাও, কোথাও উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বিকেল ৪টায় ঝড় থেমে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সংযোগ মেরামতেকাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়। তবে সদরসহ অন্য উপজেলাতে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ মেরামতের কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝড় শুরু হওয়ার আগেই নিরাপত্তার কথা ভেবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই হঠাৎ ঝড়ে বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে… শহরের চেয়ে গ্রামে ক্ষতি বেশি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তারের ওপর ভেঙে পড়েছে গাছপালা-ঘরবাড়ি। রাতভর সংযোগ লাইনে কাজ হয়েছে, এখনও কাজ করে যাচ্ছি। পর্যাক্রমে সব উপজেলাতেই দ্রুত সংযোগ চালু করা হবে।’