অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বগুড়ার বহুল আলোচিত বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ছয় মাস দেশের কোনো আদালতে জামিন চাইতে পারবেন না বলে আদেশে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে তুফান সরকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ আলম সরকার। আর দুদকের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন।
বগুড়ায় তিন বছর আগে ছাত্রী ধর্ষণ এবং ওই মেয়ে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলায় প্রধান আসামি তুফান সরকার জামিন পান গত ১৭ জানুয়ারি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফজলুল হক শুনানি শেষে তাকে জামিন দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নরেশ মুখ্যার্জি।
তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ঘটনার পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আসামি তুফান সরকারের আয়ের কোনো উৎস ছিল না। তিনি আয়কর রিটার্নে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৫ টাকা দেখান। দুদকের নোটিশে সম্পদের সঠিক হিসাব দেননি তিনি।
এই কারণে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। এ আসামি ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই থেকে জেলহাজতে আছেন।
তার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে।
এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ফের ৯ মার্চ জামিন আবেদন করেন তুফান। বিষয়টি দুদকের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন আদালতের নজরে আনেন। তখন বিষয়টি দেখে আদালত এ আদেশ দেন।
একই মামলায় জামিন প্রশ্নে রুল জারি থাকা অবস্থায় তথ্য গোপন করে নতুন করে জামিন আবেদন করায় আদালত এ আদেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
এর আগে, ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন শিক্ষার্থীর মা।
মামলায় বলা হয়, ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার কথা বলে তুফান মোবাইলে ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই নিজ বাড়িতে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন তিনি। এ ঘটনার জেরে ওই বছরের ২৮ জুলাই ওই মেয়ে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেন তুফানের স্ত্রী। করা হয় মারধরও।
ছাত্রীকে ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই দুটি মামলা করেন নির্যাতিত মেয়েটির মা। দুই মামলাতেই তুফান সরকার প্রধান আসামি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার তদন্ত শেষে প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা, আশার বড় বোন পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি, তুফানের সহযোগী আতিকুর রহমান ওরফে আতিক, মুন্না, আলী আযম দীপু, মেহেদী হাসান ওরফে রুপম, সামিউল হক ওরফে শিমুল ও এমারত আলম খান ওরফে জিতু।
প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান ওরফে রুনু ও নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিনকে।
অন্যদিকে ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার মামলায় তুফানসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তুফানসহ ১০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাতেও অভিযুক্ত। বাকি তিন অভিযুক্ত হলেন তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান, নাপিত জীবন রবিদাস ও বাদুড়তলা এলাকার আনজুয়ারা বেগম।