বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিজ বাড়িতে শিশুর বস্তাবন্দি লাশ: হত্যার ভিন্ন মোটিভ দেখছে পুলিশ

  •    
  • ৩০ মার্চ, ২০২১ ০১:২২

এসআই আল আমিনের মতে, দিনের বেলায় অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইলে অভিযুক্ত আরিফুল তার স্ত্রীকে বাসায় রেখে যেত না। যারা পেশাদার খুনি তারা দিনের বেলা এই কাজ করবে না।

সাভারের আশুলিয়ায় ৯ বছরের শিশুহত্যার ঘটনাকে রহস্যজনক বলছে পুলিশ।

রোববার রাতে টঙ্গাবাড়ি এলাকার নিজেদের বাড়ির চারতলার বারান্দা থেকে রাজা মিয়া নামের ওই শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল শিশুটি। রাতে তার বাবা কালাম মাদবরের মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি ফোন করে জানায় রাজাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার মুক্তির বিনিময়ে চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। বলা হয়, ওই ব্যক্তি রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর থেকে ফোন করেছে।

এর পরপরই কালাম আশুলিয়া থানায় অভিযোগ নিয়ে যান। তখন এলাকার লোকজন তাকে ফোন করে জানান, বাড়ির চারতলা থেকে একটি বস্তায় পাওয়া গেছে রাজার মরদেহ।

হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে কালাম মাদবরের ভাড়াটে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী লিজা আক্তারকে। ঘটনার দিন থেকে খোঁজ নেই আরিফুলেরও।

পুলিশ বলছে, পারিবারিক আক্রোশ বা পলাতক আরিফুলের ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে শিশুটিকে। আর মুক্তিপণের বিষয়টি আনা হয়েছে ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় দেয়ার জন্য।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী পুলিশ কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিনের মতে, দিনের বেলায় অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইলে অভিযুক্ত আরিফুল তার স্ত্রীকে বাসায় রেখে যাওয়ার কথা না। যারা পেশাদার খুনী তারা দিনের বেলায় এই কাজ কখনও করবে না।

সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত রাজা মিয়ার পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। পুরো এলাকায় শিশুটির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত শিশুর ‘রাজা ভিলা’ নামে চারতলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে তখন মাতম করছিলেন স্বজনেরা।

রাজা মিয়ার বাবা কালাম মাদবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেলা ২টা বাজে আমি এহানে বইসা চা-সিগারেট খাইছি। ওই ভাড়াট্টিয়া (আরিফুল) ছেলেরে ইশারা দিয়ে বসাইয়া দুইডা চা লইছে। আমার ছেলেরে খাওয়াইছে একটা, ভাড়াটিয়া খাইছে একটা। এক ঘণ্টা পর ছেলেরে ডাইকা নিয়া খাইয়া আমি শুইছি। ওই ভাড়াটিয়ার লগেই সন্ধ্যার আগ দিয়া আবার চা খাইছে পোলায়। পরে আর পোলারে পাই নাই। সাতটার সময় আমারে একজনে রিং দিছে। দিয়া কয়, তোর পোলারে আমরা কিডন্যাপ কইরা লইয়া আয়া পড়ছি। ৫০ লাখ ট্যাকা লইয়া উত্তরা আয় নয় মাইরা ফালামু। এরপরে আমি ৯৯৯-এ রিং দিছি।

‘এই ভাড়াটিয়া আইছে আমার ৭-৮ দিন ধইরা। আমার ভাড়া দেয় নাই। কয়, সামনের মাসে দুইটা ভাড়া একসাথে দিমু আঙ্কেল। আমার কাছে ট্যাহা নাই আমি নতুন আইছি। আমি কইছি, দিয়েন। হেই আমারে আঙ্কেল ছাড়া কথা কয় না। হেই আমার পোলা মারব ক্যা? তার ঘরে আমি রাত নয়ডার সময় পাঠাই পোলারে পড়বার লাইগা। পইরা আয়া পরে পোলা। তার মোবাইল দিয়া গেমস খেলে গিয়া পোলা।’

নিহত শিশুর চাচা ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার ভাবি, মানে আমার ভাইয়ের বড় বউ রাজারে খুঁজতে ওই ভাড়াটিয়ার চার তলার রুমে গেছে। ওর মধ্যে ভাড়াটিয়ার (লিজা) জামাই (আরিফুল) ওনারে ফোন দিছে। তখন বলছে, ‘জিনিসটা কি সাফ করছ? তখন বলছে যে, না এখনও করা হয় নাই। তখন ভাবি বুঝছে যে জিনিসটা এ রকম। পরে দেখে যে বেলকুনিতে লাশ বস্তার ভিতর ভরা। হাত-পা বাঁধা, গলায় রশি প্যাঁচানো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাই কালাম মাদবরের তিন স্ত্রী। প্রথম ঘরের স্ত্রীর তিন মেয়ে। তাদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে রাজা ও বাদশা। আর তৃতীয় স্ত্রীর চার বছরের ছেলে ও একটা মেয়ে আছে। রাজা আর বাদশার মা পাশেই কালাম মাদবরের আরেকটা বাসায় থাকে। অন্য দুই স্ত্রী এই চারতলা বাড়িতে থাকে।’

স্ত্রীদের নিয়ে পরিবারের কোনো সমস্যা ছিল কি না, এ বিষয়ে ইমরান বলেন, ‘ফ্যামিলির মধ্যে আমার জানামতে কোনো সমস্যা নাই। মেয়েদেরও খুব ভালো জায়গায় বিয়ে হইছে। সম্পত্তি নিয়ে ওই পরিবারের কোনো সমস্যা কখনোই শুনি নাই। কারণ তিনজন স্ত্রী থাকার পরও যে সমস্যা হয় এ রকম কোনো সমস্যা নাই। তিনজন স্ত্রীই তার (ভাইয়ের) কথামতো চলে।’

এসআই আল আমিন নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রহস্যজনক দাবি করে বলেন, ‘ইনটেনশনের দুইটা ওয়ে নিয়ে আমি কাজ করছি। ওদের মধ্যে খেলাধুলা হচ্ছে, হঠাৎ করে মারামারি লেগে গেছে। হতেই পারে। বাড়িওয়ালার ছেলে একটু দুষ্টু টাইপের হতে পারে। এটাও হতে পারে। কারণ ওই ছেলেটার (আরিফুল) কোনো ছেলেপেলে (সন্তান) নাই। ও বাসায় সারা দিন থাকত। ওর তো সঙ্গ দেয়ার মতো এ রকম একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যায়। আর অপহরণ করে মুক্তিপণ চাইলে সে তো (আরিফুল) তার ওয়াইফকে বাসায় রেখে যাওয়ার কথা না। বিকেল বেলায় সে তো তার ওয়াইফকে নিয়ে চলে যেতে পারত।

‘ওর ওয়াইফ (লিজা) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করছে, ওর হাজবেন্ড মারছে। এখন ওকে (আরিফুল) ধরলে তো বোঝা যাবে যে, ওরা দুইজন মিলে করছে।’

পারিবারিক কোনো বিষয় ছিল কি না, এমন প্রশ্নে এসআই আল আমিন বলেন, ‘এইটা গভীর তদন্তের বিষয়। তদন্ত ছাড়া আগেই বলা যাবে না। এইটা আরিফুলকে ধরার পরেই বলা যাবে। আর এক মাস হইল ওরা ভাড়া আসছে। তাহলে কেউ নিয়ে আসছে ওদের। ওই (আরিফুল) বলতে পারবে যে, আমাকে নিয়ে আসছে।’

অন্য নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়ে এসআই আল আমিন বলেন, ‘আরিফ দিছে বা আরিফ দেওয়াইছে। মুক্তিপণের বিষয়টা ডাইভার্ড করার জন্য হতে পারে। আমার এটা মনে হচ্ছে ।’

সোমবার রাত ৮টা নাগাদ মামলা নভিভুক্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা-সংক্রান্ত কাগজপত্র রেডি রেখেছি। নিহত শিশুর দাফন হলেই বাবা কালাম মাদবর থানায় আসবেন। তখনই মামলা নথিভুক্ত করা হবে।’

আরও পড়ুন: অপহরণের পর হত্যা, আটক ভাড়াটে

এ বিভাগের আরো খবর