উখিয়ার বালুখালীর চার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে ১১ জন মারা গেছেন। পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩০০টি ঘর। মৃত্যের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. মহসীন।
তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. মহসীন আরও জানান, ৮ নম্বর ক্যাম্পের ই ব্লকের একজন, ডব্লিও ব্লকের পাঁচজন এবং ৯ নম্বর ক্যাম্পের পাঁচজন মারা গেছেন।
- আরও পড়ুন: আগুন যেন তাড়া করছিল
আগুনে পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩০০টি ঘর। এসব ঘরের প্রায় ৪৫ হাজার লোক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও জানান সচিব।
তিনি জানান, আগুনে বাস্তুহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত একজনকেও যেন না খেয়ে থাকতে না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মহসীন বলেন, ‘আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াতকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
‘ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পসহ পুরো ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে।’
চার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে আগুন লাগে, যা নিয়ন্ত্রণে আসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু স্টেশনের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে যোগ দেয় সেনাবাহিনীও।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা জানান, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত। পরে পাশের ৯, ১০ ও ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
- আরও পড়ুন: উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
৮ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, ক্যাম্পের ঘরগুলো টিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি। এ কারণে দ্রুত বাড়ে আগুনের তীব্রতা।
স্থানীয় লোকজন জানান, ক্যাম্পে আগুন লাগার পর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। আতঙ্কে সড়কে অবস্থান নেয় রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষরা।
ওবায়দুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে সোমবার ৮ নম্বর ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় ‘কিছু’ রোহিঙ্গা। ধীরে ধীরে তা ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে।
থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল বশর জানান, বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, আগুনের ঘটনায় বালুখালী জুড়ে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোকে ক্যাম্প এলাকায় পৌঁছতে বেগ পেতে হয়। রাত সাড়ে ৯টার পর আগুন আর ছড়ায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও রাত সাড়ে ১২টার দিকে কোথাও কোথাও জ্বলছিল।