কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়েছে স্থানীয়দের দুই শর বেশি ঘর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমদ নিজাম উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আগুনে শিশুসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস। আর ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, ছোটাছুটি করতে গিয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, আহত ব্যক্তিদের ক্যাম্পের বিভিন্ন এনজিও সংস্থার হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বালুখালীর বলিবাজারসংলগ্ন ক্যাম্পে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরে প্রয়োজনীয় ও মূলব্যান জিনিসপত্র কিছু অবশিষ্ট আছে কি না, তা খুঁজছেন অনেকে।
ঘর হারিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার।
ওবায়দুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে সোমবার ৮ নম্বর ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় ‘কিছু’ রোহিঙ্গা। ধীরে ধীরে তা ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্প ছড়িয়ে পড়ে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী কাসেম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকের স্বজন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। আগুনে স্থানীয় বাসিন্দারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অনেকে ঠাঁই নিয়েছে স্কুলে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একজন ৯ নম্বর ক্যাম্পের বি-৮ ব্লকের বাসিন্দা আবদুর রহমান। ভয়াবহতা জানাতে গিয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, কোনোমতে জীবন নিয়ে বের হয়ে এসেছেন তারা। কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। ঘরের আসবাব সব পুড়ে গেছে।
আবদুর রহমান জানান, যখন তারা দৌড়ে পালাচ্ছিলেন, আগুন যেন তাদের তাড়া করছিল। মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রহিম মিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত এই আগুনে। বলেন, ‘আগাগোড়া বেগ্গিন (সব) পুড়ি গেইয়ি। আরার (আমাদের) ব্লকত ৮৫ ঘর আছিল। বেগ্গিন জ্বলি গেইয়ি। অন দরনর (আগুন লাগার) পর আত্মীয়স্বজন বেগ্গুন গেইয়িগুই। এহনো হনো কিয়ার হবর (খবর) না পাই। হন হডে (কে কোথায়) আছে এহনো হইত ন পারির। বার্মাত্তুন আঁরা করচোর (কাপড়) লইয়্যেরে আইত পাইজ্জি। কিন্তু এনডে করচোর লইত ন পারি। আরা ধ্বংস অই গেয়।’
চার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে আগুন লাগে, যা নিয়ন্ত্রণে আসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু স্টেশনের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে যোগ দেয় সেনাবাহিনীও।
আগুনে চার হাজারের বেশি বসতঘর ও দোকান পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন।
আগুনের কারণও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।