কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগা আগুনে শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মৃত কারও পরিচয় জানা যায়নি।
আগুন লাগার পর ছোটাছুটি করতে গিয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (এপিবিএন) তারিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আহতদের ক্যাম্পের বিভিন্ন এনজিও সংস্থার হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে প্রকৃত আহতের সংখ্যা আরও বেশি।
‘অনেক আহত চিকিৎসা নেননি। তারা নিজেদের ঘর-বাড়ি রক্ষায় ক্যাম্পের আশপাশে অবস্থান করছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘সোমবার আগুন লাগার পর যারা ঘরবাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, তারা আজ সকালে পুড়ে যাওয়া ঘরে কোনো কিছু বেঁচে গেছে কি না, তা খুঁজে দেখছেন।
‘তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোতে অবশিষ্ট নেই তেমন কিছুই। মৃত ব্যক্তিদের মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি এখনও।’
চার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে আগুন লাগে, যা নিয়ন্ত্রণে আসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে।
আগুনে চার হাজারের বেশি বসতঘর ও দোকান পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন।
আগুনের কারণও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, নাশকতার উদ্দেশ্যে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওবায়দুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির দাবি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে ৮ নম্বর ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেন কিছু রোহিঙ্গা। ধীরে ধীরে তা ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্প ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ক্যাম্পে আগুন লাগার পর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। আতঙ্কে সড়কে অবস্থান নেয় রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষরা।
থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল বশর জানান, বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, আগুনের ঘটনায় বালুখালীজুড়ে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোকে ক্যাম্প এলাকায় পৌঁছতে বেগ পেতে হয়। রাত সাড়ে ৯টার পর আগুন আর ছড়ায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও রাত সাড়ে ১২টার দিকে কোথাও কোথাও জ্বলছিল।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু স্টেশনের ছয়টি ইউনিট রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সামছু-দৌজা বলেন, ‘বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় আগুন দ্রুত পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। লাগোয়া তিনটি ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চার সহস্রাধিক বসতঘর ও দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও লোকজন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন।’
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশনের দুটি ইউনিটের পাশাপাশি টেকনাফের একটি, কক্সবাজারের দুটি এবং রামুর একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
৮ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, ক্যাম্পের ঘরগুলো টিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি। এ কারণে দ্রুত বাড়ে আগুনের তীব্রতা।