সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় র্যাব পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাওয়া ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে (স্বাধীন মেম্বার) গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শনিবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা নিউজবাংলার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মো. খালেদ উজ জামান।
তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিলেটে আনা হচ্ছে।
স্বাধীন মেম্বার এর আগে নিউজবাংলার সিলেট ব্যুরো প্রধানকে জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য র্যাব পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চান তিনি।
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা বুধবার সকালে নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালালেও অভিযোগ রয়েছে, তাতে স্বাধীন মেম্বার জড়িয়ে পড়েন জলমহাল নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিরোধের জেরে।
স্বাধীন শুক্রবার রাত ১২টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রয়েছেন। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চান। এ জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। আত্মসমর্পণ করে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সহায়তা করতে চান তিনি।
বুধবার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের পর থেকেই ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম স্বাধীনকে (স্বাধীন মেম্বার) নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।ওই তাণ্ডবের পরদিন স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের করা মামলায় আসামিও করা হয়েছে স্বাধীনকে।
আরও পড়ুন: শাল্লায় হামলা: আত্মসমর্পণ করতে চান সেই যুবলীগ নেতা
শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের বাড়ি শাল্লার পাশের দিরাই উপজেলার নাচনি গ্রামে। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারী হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে এক যুবকের দেয়া স্ট্যাটাসের জেরে নোয়াগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। অস্ত্র হাতে হাজারও লোক মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, হামলাকারীদের বেশিরভাগই আসে স্বাধীনের গ্রাম দিরাইয়ের নাচনি থেকে। স্বাধীন মেম্বারও হামলাকারীদের দলে ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই হামলা হয়।স্বাধীন মেম্বারের সঙ্গে জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর বিরোধ রয়েছে। এই বিরোধের জেরেই মামুনুল অনুসারীদের সঙ্গে তিনি এই ‘হামলায় অংশ নেন’। বাড়িঘর ভাংচুর হওয়া একাধিক ব্যক্তির অভিযোগেও স্বাধীন মেম্বারের নাম উঠে আসে।তবে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে শহীদুল ইসলাম স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম। হেফাজতের মিছিলের খবর পেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় আমি মিছিলকারীদের থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো হামলায় অংশ নেইনি।’স্বাধীন বলেন, ‘জলমহাল নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর সঙ্গে আমার বিরোধ হয়েছে। এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। তবে এই বিরোধের জেরে হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। হামলার কোনো ছবি বা ভিডিও ফুটেজেই আমাকে পাওয়া যাবে না।’গত ১৫ মার্চ দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। পরদিন মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নোয়াগাঁওয়ের এক যুবক। এই স্ট্যাটাসের জেরে হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামটিতে হামলা চালিয়ে ৮০টিরও বেশি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়।এ ঘটনায় দুটি মামলার পর এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।