সুনামগঞ্জে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সমালোচনা করে স্ট্যাটাসদাতা ঝুমন দাস আপনকে পুলিশে তুলে দিয়েছিল খোদ তার পরিবার। তার পরেও কেন হামলা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার স্ত্রী সুইটি রানী দাস।
হামলার পর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নে নোয়াগাঁও এলাকায় আপনের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় তার মা নিবা রানী দাস ও স্ত্রী স্ইুটি রানী দাস ও কাকা বাচ্চু দাসকে।
সুইটি জানান, তার স্বামীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তেজনা তৈরি হলে তিনিই তাকে পুলিশে তুলে দেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কী অপরাধ করছে আমরা জানি না। কিন্তু যখন শুনছি হে খারাপ কাজ করছে, আমিই এলাকাবাসীরে কইয়া দিছি তাইন কোনানো (কোথায়) আছুইন।…আমি তো আমার স্বামীরে ধরাইয়া দিছি পুলিশও। তবুও কেনে আমরার উপরে এই হামলা?’
গত সোমবার দিরাইয়ে আসেন মামুনুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করেন সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক নানা কথা উল্লেখ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডীপুরসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে মামুনুল হকের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা ও লুটপাট চালায়।
হামলার বর্ণনা দিয়ে সুইটি বলেন, ‘হঠাৎ করি আমরার ঘরে দিকে আওয়া দেখিয়া আমি ও আমার ছোট ননদ ঘরে লুকাইছি। আমার ৬ মাসের একটা শিশু সন্তান আছিল। তারা আমার সন্তানরে মারার হুমকি দেয়। পরে তারা ঘরের জিনিসপত্র ভাঙে।
‘পরে আমার একটা সোনার চেইন ও নগদ ৪৩ হাজার টাকা নিয়া গেছে। তারা আমার হাতের ডান কাঁধও লাঠি দিয়া হাত ভাঙি দিছে।’
দুই মাস আগে সুনামগঞ্জ শহর থেকে শাল্লায় আসেন আপন। শহরের মার্কেটিং ব্যবসা চালিয়ে গেলেও এবার কৃষি কাজ শুরু করেছেন তিনি। রাজনৈতিক সচেতন এই যুবক প্রায় সময় সামাজিক মাধ্যমে তার মত প্রকাশ করতেন।
আপনের মা নিবা রানী দাস বলেন, ‘আমার ছেলে কিতা (কী) করছে আমি জানি না। খালি জানি কিতা লেখালেখি করছিল। শুনছি ইটা গুরুতর অপরাধ যার কারণে নিজের ছেলেরে ধরিয়া দিছি। তারপরের দিন সকালে এই হামলা ওইব ভাবছিলাম না।
‘আমরা গরিব মানুষ। কৃষিকাজ করিয়া খাই। দুই ছেলের মধ্যে হে ছোট। খুব আদর করিয়া বড় করছি। আমি সরকারের কাছে হাত জোড় করি, আমি নিজে দায়িত্ব লইমু। ছেলের হে এমন কাজ করতো না।’
আপনের কাকা বাচ্চু দাস বলেন, ‘সে ভুল করছে। ভুলটা ক্ষমা করিয়া দিলে হে তার বউ আর ছোট বাচ্চারে নিয়া শান্তিতে থাকতে পারবো। ছোট বাচ্চাটার মুখের দিকে থাকাইয়া সরকার যদি তারে ক্ষমা করে আমরা সারাজীবন কৃতাজ্ঞ থাকমু।’
পরিবারটির পাশে আওয়ামী লীগ নেতা
হামলার বিকালে দাস আপনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির ইমন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে আসামিদের চিহ্নিত করে দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।’