সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের হামলার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের করা মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের করা মামলায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বুধবার শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৭টি হিন্দুবাড়িতে হামলা চালানো হয়। এসব বাড়ি থেকে টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা।
বৃহস্পতিবার রাতে হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল প্রথম মামলাটি করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের সদস্য স্বাধীন মিয়াকে। তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ হামলার ঘটনায় ব্যথিত। তারপরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মামলা করেছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের ধরতে সক্ষম হবে।’
পুলিশের করা মামলার বিষয়ে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘মামলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে কারও নাম বা মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারব না।’
গত সোমবার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক শাল্লায় একটি ধর্মীয় সভা করেন। তিনি সেখানে গিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
শাল্লায় হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় একটি মামলার প্রধান আসামি ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীন
এর প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় এক যুবক মামুনুলের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই স্ট্যাটাসে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে মামুনুলের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে স্ট্যাটাসদাতাকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে।
তবে হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা এতেও সন্তুষ্ট হননি। দিরাইয়ের দুটি মসজিদে মাইকিং করে নেতা-কর্মীদের জড়ো করে মিছিল করে শাল্লার গ্রামে এসে ব্যাপক হামলা করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এই জমায়েত ও মিছিলের কথা জানত স্থানীয় প্রশাসন। তবে হেফাজত নেতারা তাদের আশ্বাস দেন, তারা কেবল মিছিল করে চলে আসবেন। আর সে আশ্বাসে আস্থা রেখে পুলিশ নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। আর হেফাজত কর্মীরা নির্বিঘ্নে হামলা করে চলে যায়।
একটি মামলার বাদী হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বলেন, ‘একই সঙ্গে বলতে চাই, এই মামলা যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে বিচারের মাধ্যমে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। আর কেউ যেন এই ধরনের অপকর্ম করার সাহস না পায়, এই বিচারের মাধ্যমে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন।’