বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাল্লায় হামলার পর র‍্যাব-পুলিশের অভয়

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২১ ১২:৪৫

র‍্যাবের ডিজি বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে। কেউ যদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে, তা সহ্য করা হবে না।’

সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু গ্রামে হামলার আশঙ্কা জেনেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, এমন অভিযোগ ওঠার পর এখন অভয় দিচ্ছেন পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে শাল্লার হবিবপুর নোয়াগাঁও গ্রাম পরিদর্শন করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। তার গ্রামের বাড়ি এই উপজেলাতেই। র‍্যাব ডিজি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করছে, তাদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হবে।

‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এক পক্ষ সহ্য করতে পারছে না। তাই সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করে ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে জঙ্গিবাদ দমনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে বিশ্ব দরবারে দেশের সুনাম অর্জন করেছে, সেভাবে অচিরেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে।’

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক এই দেশ সবার সমান অধিকার রয়েছে। কেউ যদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে তা সহ্য করা হবে না।’

হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে র‍্যাবের মহাপরিচালক। ছবি: নিউজবাংলা

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আটকও হয়নি কেউ।

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও জানান, বুধবার হামলার ঘটনার পর গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের টহল দেখে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে গ্রামে ফিরতে থাকেন আতঙ্কিতরা।

জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন. পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রামে পুলিশের টহল থাকবে।

এই গ্রামের এক তরুণ মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাতে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতার অভিযোগ আনা হয়।

হামলার পর ঘর ছেড়ে হাওরে আশ্রয় নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: নিউজবাংলা

১৫ মার্চ শাল্লার পাশের দিরাইয়ে সমাবেশ করে হেফাজত। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা মামুনুল ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। পরদিনই নোয়াগাঁও গ্রামের ওই তরুণের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই স্ট্যাটাস নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে এলাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় হেফাজত।

উত্তেজনা আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ফেসবুকে পোস্ট দেয়া তরুণকে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দেন।

বুধবার সকালে কয়েক হাজার মানুষ দা-লাঠিসহ নোয়াগাঁও গ্রামে মিছিল নিয়ে এসে ভাঙচুর করে ৮৭টি হিন্দু বাড়ি। এসব ঘর থেকে টাকাপয়সা-স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় তারা।

শাল্লার ওই গ্রামে বসবাস করেন মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি: নিউজবাংলা

গ্রামবাসীর অভিযোগ, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আর আতঙ্ক সত্ত্বেও ওই গ্রামের নিরাপত্তায় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ ছিল না; ছিল না পুলিশের বাড়তি নজরদারি।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, হেফাজত নেতাদের আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে পুলিশ সব সময় সতর্ক ছিল।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল-মুক্তাদির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকেই উত্তেজনা ছিল। উত্তেজনার খবর পেয়ে রাতেই আমরা হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে বসি। তখন তারা মিছিল না করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

‘এমন আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। কিন্তু সকালে হঠাৎই মিছিল বের করে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা তদন্ত করে বের করা হবে।’

১৫ মার্চ শাল্লার পাশের দিরাইয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের মামুনুল। ছবি: নিউজবাংলা

একই দাবি করে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ‘আমরা রাতে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা মিছিল করবেন না কথা দিয়েছিলেন।

‘সকালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যখন পুষ্পস্তবক অর্পণ করছিলাম, তখনই মিছিলের খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিছিলকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু লোক নদী সাঁতরে পার হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালায়। তখন পুলিশের করার কিছু ছিল না।’

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের স্থানীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘রাতেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। সকালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। তারপরও ওই গ্রামবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশের আগাম ব্যবস্থা না নেয়া রহস্যজনক। পুলিশ তৎপর থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।’

এ বিভাগের আরো খবর