চার ছেলেমেয়ে নিয়ে জাকির হোসেন ও কাজল আকতারের সংসার। কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ের সাবানঘাটা গ্রামে তাদের টিন-বাঁশের কাঁচা বাড়ি।
বাড়ির দুটি কক্ষ। এর একটিতে সবচেয়ে ছোট সন্তান ১৫ মাস বয়সী ছেলে মাহেরকে নিয়ে ঘুমাতেন মা ও বাবা। আর পাশের ঘরে থাকত তাদের অন্য তিন সন্তান; ১১ বছরের মীম আক্তার, ৯ বছরের মিতুমনি এবং ১৩ বছরের জাহেদুল ইসলাম।
সোমবার রাতে কোনো কাজে বাইরে ছিলেন রিকশার মেরামতকারী জাকির। সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কাজল।
মধ্যরাতে হঠাৎ বাড়িতে আগুন লাগে। টের পেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে কাজল বাড়ি থেকে বের হতে পারলেও ভেতরে থেকে যায় অন্য তিন সন্তান। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন গিয়ে আগুন নেভালে পাওয়া যায় তাদের পুড়ে যাওয়া মরদেহ।
প্রতিবেশী সাঈদ আকবর ফয়সাল বলেন, রাতে ওই বাড়িতে আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। তাদের আসতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় লোকজনই আগুন নেভাতে শুরু করেন। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তিন শিশুকে।
আরেক প্রতিবেশী বাপ্পি শাহরিয়ার জানান, বাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত শিশুদের ঘরেই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে। মা ও ছোট ছেলে পাশের ঘরে থাকায় তারা দ্রুত বের হতে পারে।
ঘুমন্ত অবস্থাতেই আগুনে পুড়ে যায় তিন শিশু। ছবি: নিউজবাংলা
শিশুদের মা কাজল আকতারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি জানান, আগুন লাগার পরপরই ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তিনি বের হয়ে যান। সে সময় আর কিছু ভাবার মতো পরিস্থিতি ছিল না। ঘরের কিছু জিনিস বের করার চেষ্টা করছিলেন তিনি।
পরে যখন হুঁশ আসে তখন দেখেন অন্য সন্তানরা বের হতে পারেনি; তাদের বের করার মতো অবস্থাও তখন আর ছিল না।
চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সাইফুল হাসান বলেন, ‘আগুন লাগার খবরে দ্রুতই আমরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হই। কিন্তু জায়গাটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় আমাদের গাড়ি সেখানে সময়মতো পৌঁছাতে পারেনি। সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মুহাম্মদ জোবায়ের জানান, রাতেই শিশুদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।