নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
মামলায় বাদল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে মাহবুব রশিদ মঞ্জু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরী ও নিহত আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ হোসেনকেও।
আলাউদ্দিনের মৃত্যুর ছয় দিন পর সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম ২ নম্বর আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন কাদের মির্জার অনুসারী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন পিটন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কাদের মির্জার সমর্থকদের ওপর হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ করা হয়েছে।
মুখ্য বিচারিক হাকিম এসএম মোছলে উদ্দিন মিজান সোমবার বিকেলে মামলাটি নিয়ে নোয়াখালীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শংকর কুমার ভৌমিক এই তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।
নিহত আলাউদ্দিনের ভাই মো. এমদাদ হোসেন (চেয়ারে বসা)। ছবি: নিউজবাংলা
মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে ১০৫ জন সন্ত্রাসী বসুরহাটের মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। সে সময় আলাউদ্দিন, এমদাদসহ আরও কয়েকজন গুলি ও বোমা বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় পরদিন সালাহ উদ্দিন পিটন কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি।
আদালতে করা মামলায় আলাউদ্দিন, এমদাদসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গেল রোববার নোয়াখালীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ৪ নম্বর আমলি আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন নিহত আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ।
এতে কাদের মির্জা, তার ছেলে মির্জা মাশরুর, ভাই শাহদাত হোসেনসহ ১৬৪ জনকে আসামি করার আরজি জানানো হয়।
বসুরহাটের মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। ছবি: নিউজবাংলা
বিচারক এসএম মোসলেহ উদ্দিন মিজানের এজলাসে বেলা ৩টার দিকে হয় শুনানি। বিচারক কোম্পানীগঞ্জ থানার কাছে জানতে চান, এই ঘটনায় কোনো মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে এ বিষয়ে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর ভবন এলাকায় ৯ মার্চ বিকেলে মেয়র কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংষর্ঘ হয়। এতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিসহ আহত হন অন্তত ২৫ জন।
সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীরা উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে পৌরভবনের দিকে এগিয়ে যান। পরে সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় মিজানুর রহমানের অনুসারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও শ্রমিক লীগের চর ফকিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি (সাবেক যুবলীগ কর্মী) মো. আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন আরও অন্তত ১৩ জন।
এই ঘটনার পর নিহত আলাউদ্দিনের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে দুই দফায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু মামলা নেয়নি থানা-পুলিশ।
কোম্পানীগঞ্জ উপজলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল। ছবি: নিউজবাংলা
পরে এমদাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি এজাহার থেকে আবদুল কাদের মির্জার নাম বাদ দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু এতে রাজি হননি তিনি। এ কারণে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করছেন।’
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার মিজানুর রহমান বাদলকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।
বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা। শুরুতে কারও নাম উল্লেখ না করলেও পরে মির্জা কাদের জানান, তার এসব বক্তব্য নোয়াখালী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।
পরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এমপি নিজাম ও একরাম চৌধুরীর সঙ্গে কাদের মির্জার বিরোধ। এসবের মধ্যে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল ও মির্জা গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।
সাংবাদিক হত্যা ও দলের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে ২৪ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।