সাড়ে তিন বছরের চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা থেকে আলাদা হয়ে বাড়ি ফিরেছে যমজ বোন রাবেয়া-রোকেয়া।
পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামে সোমবার বিকেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে ফেরে যমজ দুই বোন।
এ সময় গোটা গ্রামজুড়ে দেখা যায় উৎসবমুখর পরিবেশ। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় এলাকাবাসী, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসন।
শিশু দুটির সফল অস্ত্রোপচার যেন স্বস্তি এনে দিয়েছে সবার মনে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় প্রত্যেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
রাবেয়া-রোকেয়ার মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘রাবেয়া-রোকেয়ার মতো যদি ভবিষ্যতে আবারও জোড়া মাথার যমজ শিশু জন্ম নেয় তাহলে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ থাকবে না।’
শিশুদের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চা দুটির যখন জন্ম হয়, তখন খুব হতাশার মধ্যে ছিলাম। অনেকেই অনেক কটুকথা বলত। কিন্তু এখন আমি আমাদের এই দুই বাচ্চার জন্য সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। আজ আমি বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। তিনি সহযোগিতা না করলে আমাদের পক্ষে এত বড় খরচ করা সম্ভব হতো না।’
রাবেয়া-রোকেয়ার বাড়ি ফেরার খবরে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘শিশু দুটির বাবা-মা যেহেতু শিক্ষক দম্পত্তি, তাদেরও আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব। আমরা এই পরিবারটির পাশে আছি এবং পাশে থাকব।’
রাবেয়া-রোকেয়া সুস্থ হয়ে ফেরায় উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসী। ছবি: নিউজবাংলারাবেয়া-রোকেয়ার সঙ্গে বাড়িতে এসেছেন হাঙ্গেরির সাংবাদিক রিচার্ড ফুক্স। ২০১৭ সাল থেকে এই শিশুদের চিকিৎসার খবর ফলো করে আসছেন তিনি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে রাবেয়া-রোকেয়া আজ সুস্থ। এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন।
আটলংকা গ্রামের শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের ঘরে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া। জন্মের সময় থেকে শিশু দুটির মাথা জোড়া ছিল। পরে তাদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরেন বাবা-মা। বিষয়টি নজরে এলে শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী।
শিশু দুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায় গ্রামবাসী। ছবি: নিউজবাংলাপরে সিঙ্গাপুর-হাঙ্গেরিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডজন খানেক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়েছে শিশু দুটির। সবশেষ ২০২০ সালের ১ আগস্ট সিএমএইচে শিশু দুটিকে আলাদা করতে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
টানা ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে আলাদা হয় শিশু দুটি। গেল রোববার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বিদায় জানানো হয় এই দুই শিশুকে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা মুজিববর্ষ পালন করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, সেই সময় এত বড় সফল একটা অস্ত্রোপচার করে সফলতা অর্জন করা, এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন।’