বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাদ্রাসায় নির্যাতন: হিংস্রতা বাদ দিয়েছি, বললেন প্রিন্সিপাল

  •    
  • ১৪ মার্চ, ২০২১ ০৮:৩২

গত সেপ্টেম্বরে আশুলিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসায় দুই শিশুকে বেপরোয়া বেত্রাঘাতের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে শিশু দুটি মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গেছে। এর প্রিন্সিপাল বলছেন, ‘আমরা এখানে বাচ্চাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতেছি। হিংস্র মনোভাবটা বাদ দিয়ে আমরা তাদের শিক্ষা ও দীক্ষা দিচ্ছি।’

গত সেপ্টেম্বরে শিশুকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে শিক্ষকের বেদম বেত্রাঘাতের ভিডিও ভাইরালের পর সাভারের আশুলিয়ায় একটি কওমি মাদ্রাসা বন্ধ থাকে কয়েক মাস। মাস দুয়েক আগে মাদ্রসাটি চালু হলেও ভুক্তভোগী দুই ছাত্র আর সেখানে পড়েনি। তারা এখন কোথায় আছে, সেটাও বলতে পারছে না মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

মাদ্রাসাশিক্ষক এখনও কারাগারে। তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। তবে এরপর আর কী হয়েছে, সেটি বলতে পারছে না স্থানীয় থানা।

মাদ্রাসাটির আগের শিক্ষকরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। নতুন করে চালু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল বলেছেন, তারা সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। শিক্ষকদের হিংস্রতার বদলে মানবিক হয়ে ছাত্রদের পড়াতে বলেছেন।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিশুকে বেদম পিটুনির ভিডিও ভাইরালের পর আশুলিয়ার সেই ঘটনার ভিডিওটিও আবার আলোচনায় এসেছে। এই ভিডিওটিও ছড়াচ্ছেন বহুজন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার শ্রীপুর মথনেরটেক এলাকায় জাবালে নূর মাদরাসায় দুই ছাত্রকে বেত্রাঘাতের ছবি ভাইরাল হয়। হাত-পা বেধে শরিফুল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান নামে দুই শিশুশিক্ষার্থীকে উন্মত্তের মতো বেত্রাঘাত করছিলেন মাদ্রাসাটির শিক্ষক মো. ইব্রাহিম।

ফেসবুকে এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর আটক হন শিক্ষক ইব্রাহিম। মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে।

ঘটনার পরদিন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কমে গেলে গত বছরের শেষদিকে মাদ্রাসাটি আবার চালু করে।

বৃহস্পতিবার শ্রীপুর মথনেরটেক এলাকায় মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ভেতর থেকে তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেট। বহুতল ভবনের চারতলার এক পাশে শিশুদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ডাকতেই ভেতর থেকে মাদ্রাসার এক শিক্ষক চাবি দিয়ে তালা খুলতে পাঠালেন এক শিশুকে।

মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিন নোমানকে পাওয়া না গেলে কথা হয় আরেক শিক্ষকের সঙ্গে।

সেদিনের নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদির।

সেদিনের বর্ণনা দিয়ে কাদির বলে, ‘ওরা দুইজন (মাহফুজ ও শরিফুল) পালায় গেছিল। পরে খুঁজতে খুঁজতে পায় নাই। পরে শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ডে পাইছে। পরে হুজুর মাদ্রাসায় আনছে। আইনা হাত-পা বানছে বাইন্ধা মারছে।’

মাদ্রাসায় নির্যাতনের ভিডিও থেকে নেয়া ছবি।

মাদ্রাসার শিক্ষক মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ওই দিনের ঘটনার পরে আগের তিন শিক্ষকও চলে গেছেন। গত তিন মাস তিনি শিক্ষক হিসেবে আছেন। প্রিন্সিপালসহ আরও তিনজন এখন এই মাদ্রাসা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই অমানবিক হয়েছে। স্বাভাবিক কমনসেন্স থেকে কখনই এটা এক্সসেপ্টেবল না এই কাজটা। মারার একটা ধরন আছে। সবাই তো কম-বেশি দুষ্টামি করলে একটু শাসন করে। কিন্তু আমরা যতটুকু বুঝেছি তার মানসিক সেন্টিমেন্টটা এবনরমাল হয়ে গেছিল।

‘এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশে না সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়েছে। আমরা যে যেখান থেকে দেখেছি সবাই আমরা প্রতিবাদ করেছি। এ ঘটনার পর থেকে আমরা যারা আছি বর্তমানে সবাই সতর্ক আছি, যাতে এমন কাজ আর না হয়।’

মারধর করা সেই শিক্ষক কোথায় আছেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমরা এটা কিছু বলতে পারব না। তবে এতটুকু জানি ওনাকে (অভিযুক্ত শিক্ষক ইব্রাহিম) পুলিশ নিয়ে গেছিল।’

মাদ্রাসা চালায় কে জানতে চাইলে ভবনের ম্যানেজার মো. রাশেদ তার পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, ‘তিন-চার মাস হলো মাদ্রাসা চালু হইছে। ওই ঘটনার পর এত দিন বন্ধ ছিল। মাদ্রাসার মালিক এই বাড়ির মালিক নিজেই। সমস্যা নাই আমার সাথে কথা বলেন। আমরাই নিজেরাই প্রিন্সিপালসহ পরিচালনা করি।’

প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা নাজিম উদ্দিন নোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে বিষয়টা ছিল ঘরোয়া একটা পরিবেশ। ভবন মালিকের (হাজি আব্দুল জব্বার) নিজের ছেলে পড়ত। পাশাপাশি আরও কয়েকটা ছেলে যারা পড়ত তারা নিজ খরচে পড়ত।

‘যারা অনাবাসিক তারা আসত পড়ে চলে যেত। যারা আবাসিক ছিল নিজেদের খরচা দিয়ে থাকত। কিন্তু ওনাদের প্ল্যানটা ওইভাবে ছিল না জাস্ট একটা ভিত্তি।’

প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বেফাতুল মাদানি কওমিয়া বাংলাদেশ নামে কওমি শিক্ষা বোর্ডে এটার একটা নিবন্ধন আছে। ওই সময়ে ছিল আর কী। যেটা আবার আমি যেহেতু এই বছর দায়িত্বটা নিয়েছি এটা আবার নতুন করে ওই বোর্ডেই নবায়ন করব।’

নির্যাতনে নাম আসা শিক্ষক মো. ইব্রাহিম কোথায় আছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি লোকমুখে শুনেছি এতটুকু জানি যে, উনি এখনও হাজতেই আছেন।’

মাদ্রাসার চিত্র কেমন, এমন প্রশ্নে প্রিন্সিপাল বলেন, ‘এখন স্টুডেন্ট ভর্তি আছে ৩৫ জন। আবাসিকে ২৫-২৬ জন এ রকম হবে। আমরা এখানে বাচ্চাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতেছি। হিংস্র মনোভাবটা বাদ দিয়ে আমরা তাদের শিক্ষা ও দীক্ষা দিচ্ছি। আমার এখানে এই কন্ডিশনের ওপর দুইজন নবীন শিক্ষক নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেছি।’

মামলাটির তদন্ত করা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টুম্পা সাহা বর্তমানে ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চে বদলি হয়ে গেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাছাত্র মাহফুজের বাবা মো. এমাদুল মামলা করেছিলেন। ঘটনার দিনই আসামি শিক্ষক ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে ওই মামলায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছি। আসামি বর্তমানে কারাগারেই আছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর