নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিন। আধিপত্য বিস্তারের এই গোলাগুলিতে থেমে গেছে তাকে নিয়ে পরিবারের সব স্বপ্ন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামে আলাউদ্দিনের বাড়ি। যেখানে মঙ্গলবার রাত থেকেই চলছে শোকের মাতম। বিলাপ করতে করতে বুধবারও বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী পারভিন আক্তার সুমি।
এর এক ফাঁকে নিউজবাংলা কথা বলে সুমিসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। সুমি জানান, তার স্বামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে শেষবার ফোন করেন। ওই সময় আলাউদ্দিন গাড়ি চালানো শেষে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। তবে বাড়ি আর ফেরেননি তিনি। গভীর রাতে আত্মীয়স্বজনের কাজে জানতে পারেন, পৌরসভা চত্বরে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন তার স্বামী।
সুমির ভয় তার চার বছরের ছেলে ও দেড় বছরের প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে। দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে তিনি বিলাপ করছিলেন, ‘প্রতিবন্ধী এ মেয়ে নিয়ে এহন কী করুম। আমার মেয়ের চিকিৎসা এহন কে করবে। আমি কার ধারে (কাছে) যাব।
‘আমি অবলা রাই (বিধবা) হোয়ে গেছি। কে আমাকে বরণ করে নেবেগো। আপনারা আমার মেয়েরে দিখলে বুঝবেন গো। আমি কী করুম গো, এই ছেলেমেয়ে দুটোরে লই। আমি কেমনে চলুমগো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটার বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী এটার একটা লাইন করে দেক। নই আমি কার কাছে যামু।’
নিহত যুবলীগ কর্মী মো. আলাউদ্দিন
আলাউদ্দিনের মা মরিয়ম নেছা ছেলেহত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। তিনি বলেন, অভাবের সংসার। নাতনি প্রতিবন্ধী। নাতিটাও ছোট। কীভাবে কী করবেন বুঝতে পারছেন না তারা।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে মঙ্গলবার রাতে বসুরহাটের পৌর মেয়র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা কাদের ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এতে নিহত হন মো. আলাউদ্দিন। সংঘর্ষে ১৩ জন গুলিবিদ্ধ ছাড়াও আহত হন আরও ৩০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে ২৮ জনকে আটকের খবর জানানো হয়। তবে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় কিংবা তারা কোন পক্ষের অনুসারী নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
আলোচিত এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। মামলায় ৯৮ জনের নামসহ ২৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।