বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টপ টেনে হামলায় ছাত্রলীগ?

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২১ ২৩:৪২

‘টপ টেন শোরুমে হামলা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মারুফ হাসান টিটুর নেতৃত্বে। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনেরও কর্মচারী। মামলায় ১৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে টিটুকে। হামলার সময় হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছিলেন তিনি।’

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর মাস্ক পরে হামলা চালায় ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল। এ সময় বিভাগের আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয় কম্পিউটার অপারেটর মিজানুর রহমান বাচ্চুকে। নিয়ে যাওয়া হয় বিভাগের সিসিটিভির হার্ডডিস্ক ড্রাইভ।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা হয় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায়। ঘটনার ২১ দিন পর এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আলিফ হোসেন হীরা ও শাকিল আহমেদ।

রোববার টেইলারিং ব্র্যান্ড টপ টেনের বরিশাল শোরুমে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায়ও এসেছে এই দুইজনের নাম। শাকিলকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়। হীরাকে করা হয়েছে মামলার ১০ নম্বর আসামি।

টপ টেন শোরুমের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক তরুণের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। পাঞ্জাবি পরা ওই ছেলেকে জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারী মারুফ হাসান টিটু বলে শনাক্ত করেন স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী। তবে তারা কেউই তাদের নাম প্রকাশে রাজি হননি।

আলোচিত এই ঘটনায় ২১ জনের নাম এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত করে কোতোয়ালি মডেল থানায় সোমবার মামলা করেন টপ টেন শোরুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইমরান শেখ। এদের মধ্যে পাঁচজনকে রোববার হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। মামলার ১ নম্বর আসামি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

হামলার সময় গোল দাগ চিহ্নিত ব্যক্তিকে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মারুফ হাসান টিটু বলে শনাক্ত করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী

বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সদর রোডে রোববার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, ঘটনায় যারা জড়িত তাদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে; রয়েছে পুলিশের গাফিলতিও। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মামলার ১৪ জন আসামি বরিশালের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক আনিসুর রহমান।

আসামিরা হলেন কলেজ এভিনিউ এলাকার মারুফ হাসান টিটু, নিউ সার্কুলার রোডের মুহিদুল ইসলাম মুহিদ, লুৎফর রহমান সড়কের তাজিম হাওলাদার, কলেজ রোড এলাকার সৈয়দ আলিফ হোসেন হিরা, শুভ শীল, সুখ রানা হক, গনপাড়া এলাকার সুজন, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নাজমুল হাসান রনি, হাটখোলা রোড এলাকার নাদিম মাহমুদ হৃদয়, কলেজ রোড এলাকার ফাহিম হোসেন, লুৎফর রহমান সড়কের আল আমিন হোসেন সোহান, কাশিপুর মহুয়া এলাকার মিজান শরীফ, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নয়নপুর এলাকার ইকবাল হোসেন ও নগরীর কসাইখানা এলাকার নিলয় আহম্মেদ রাব্বি।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলার মামলায় নামধারী ২১ জনের অধিকাংশ বরিশালের প্রভাবশালী তিন ছাত্রলীগ নেতার অনুসারী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক টিটু জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের সঙ্গে টিটুর বেশ কিছু ছবিও পাঠিয়েছেন নিউজবাংলাকে।

জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের সঙ্গে বাইক র‍্যালিতে মারুফ হাসান টিটু।

মামলায় গ্রেপ্তার এক নম্বর আসামি রাকিব জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। রাজিব হোসেন খানের মিছিলের ছবিতে তাকে সামনের সারিতেই দেখা গেছে। গ্রেপ্তার রাকিব বরিশাল সিটি করপোরেশনের যানবাহন ও লাইসেন্স শাখার কর্মচারী।

সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খানের সঙ্গে ছবিতে রাকিব

শাকিল পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমের অনুসারী হিসেবে। টপ টেনে হামলার পর মুনিমের সঙ্গে শাকিলের ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে। বিএম কলেজে হামলার ঘটনাতেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শাকিল।

টপ টেনের মামলার ১০ নম্বর আসামি সৈয়দ আলিফ হোসেন হীরাকে বিএম কলেজে হামলার ঘটনায়ও গ্রেপ্তার করেছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক প্রলয় কান্তি। তাকেও সবাই আতিকুল্লাহ মুনিমের অনুসারী হিসেবেই চেনেন। নিউজবাংলার কাছেও ওই নেতার সঙ্গে হীরার প্রচুর ছবি এসেছে।

প্রভাবশালী তিন ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ, মুনিম ও রাজিবের সঙ্গে সৈয়দ আলিফ হোসেন হীরা

সোহান, ফাহিম, শুভসহ মামলার আসামিদের অনেকেই জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খানের অনুসারী বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল জেলা ছাত্রলীগেরই দুই সহসভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে প্রথমে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। পরিচয় দেয়া হলে তিনি জানান, এক অসুস্থ রোগীর সামনে আছেন। একটু পরে ব্যাক করবেন।

এর পর তিনি আর কল ব্যাক করেননি। পরে তাকে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। সাড়া না মেলায় হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি।

ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান ও সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিমের সঙ্গেও। কিন্তু তারা ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।

ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না জানতে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনেই সংযোগ কেটে দেন। পরে তাকে আবার ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বরিশালের গবেষক ও লেখক আনিসুর রহমান খান স্বপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলেজের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার হলে দ্বিতীয়বার একই অপরাধীরা অপরাধ করতে সাহস পেত না এবং শহরে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করতে পারত না।’

তিনি বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যেই ঈদ। ঈদের মধ্যেই বরিশালের বাজার জমজমাট থাকবে। এর আগে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়বে।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘কারও রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখছি। এ ধরনের অপরাধ যারা করেছে তাদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

আরও পড়ুন: বরিশালে কি আবারও সন্ত্রাসের রাজত্ব

এ বিভাগের আরো খবর