বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই প্রতিবন্ধী নারী চেয়েছিলেন মায়ের চিকিৎসা

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২১ ২১:০০

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আজ সকালে ওই নারী ও তার মাকে খুঁজে বের করে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য থানায় নিয়ে আসি। মামলা হয়েছে। ওই নারীকে চিকিৎসার জন্য থানার পক্ষ থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন।’

ভাড়া না দিতে পারায় বাকপ্রতিবন্ধী সেই নারীকে বাস থেকে নামিয়ে দিতে হেলপার নাহিদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চালক মো. সবুজ। এরপরেই নাহিদ বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন তাকে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‍্যাব সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

এর আগে সোমবার রাত দেড়টার দিকে কেরানীগঞ্জের কুচিয়ামারা এলাকা থেকে এন মল্লিক পরিবহনের বাসটির চালক মো. সবুজ ও হেলপার নাহিদকে আটক করে র‍্যাব-১০। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুইজন ওই নারীকে বাস থেকে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান আশিক বিল্লাহ।

তিনি বলেন, ৭ মার্চ কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকা থেকে ওই নারী গুলিস্তান-নবাবগঞ্জ রুটের এন মল্লিকের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৩-১৫২১) চড়েন। হেলপার নাহিদ ভাড়া চাইলে তিনি কথা বলতে পারেন না বলে সঙ্গে থাকা কাগজে লিখে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তার কাছে ভাড়া নেই। তখন চালকের নির্দেশে তাকে বাসের দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন নাহিদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনা এক পথচারী তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন, যা পরদিন ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর চালক ও হেলপার গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করেন। সোমবার গভীর রাতে চালক ও হেলপারকে আটকের পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গুলিস্তান বাসডিপো থেকে ঘটনার আলামত হিসেবে এন মল্লিকের সেই বাস জব্দ করা হয়। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে ঘটনার নির্মমতা দেখেই বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করতে র‍্যাব অভিযান চালায় বলে জানান আশিক বিল্লাহ।

তিনি জানান, চালক সবুজের ড্রাইভিং লাইসেন্স জব্দ করা হয়েছে। তিনি হালকা যান চালানোর লাইসেন্স দিয়ে বাস চালাচ্ছিলেন। তাই তার লাইসেন্স বাতিলের জন্য ও এন মল্লিক পরিবহনের রুট পারমিট যাচাই করতে বিআরটিএতে চিঠি দেয়া হবে।

পথচারীদের কাছে সেই নারী লিখিতভাবে দাবি করেছিলেন, এন মল্লিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাকে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিল।

এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন কি না ও বাসের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় বাসমালিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আরও তদন্তে অন্য সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।’

এই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন ওই প্রতিবন্ধী নারীর মা সমর্ত বানু। আসামি করা হয়েছে চালক সবুজ ও হেলপার নাহিদকে।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার বাসচালক মো. সবুজ ও হেলপার নাহিদ। ছবি: নিউজবাংলা

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফরোজা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আজ সকালে ওই নারী ও তার মাকে খুঁজে বের করে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য থানায় নিয়ে আসি। মামলা হয়েছে। ওই নারীকে চিকিৎসার জন্য থানার পক্ষ থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন। আসামি দুইজনই গ্রেপ্তার আছেন। আমরা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখব।’

বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আফরোজ আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার নাম মিষ্টি এলায়েত শিল্পী। তিনি তার মায়ের সঙ্গে দোহারের জয়পাড়া এলাকায় থাকেন। তার মা অসুস্থ। এ জন্য তিনি বাসে চড়ে মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।’

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে বাকপ্রতিবন্ধী মিষ্টির মাকে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফোন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় জেনেই খেপে যান তিনি। বলেন, ‘সাংবাদিক হইসেন তো কী হইসে? আপনে আমার মাইয়্যার সম্বন্ধে জিগান ক্যান? কোনো সাংবাদিকের দরকার নাই। আপনেরাই আমার মাইয়্যার সমস্যা করবেন।’

এর পর থেকেই ফোন কেটে দেন সমর্ত বানু। সেই থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

রোববার সকালের ওই ঘটনার যে ভিডিও সোমবার ফেসবুকে ভাইরাল হয় তাতে দেখা যায়, এন মল্লিকের বাসটি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় বোরকা পরা এক নারীকে। রাস্তায় পায়ে আঘাত পেয়ে কাঁদছিলেন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে টেনে তোলেন।

মোহাম্মদ কাইয়্যূম নামের এক পথচারী ঘটনাটি নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে কাইয়্যুম বলেন, ‘বাসটির দরজায় দাঁড়িয়ে হেলপার একজন নারীর হাত ধরে টানাটানি করছিলেন দেখে আমার সন্দেহ হয়। তখনই আমি মুঠোফোনে ভিডিও করা শুরু করি। এর মধ্যেই দেখতে পাই, ওই নারীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হলো বাস থেকে। তখন আমরা গিয়ে তাকে উঠাই। তার কাছে গিয়ে বুঝতে পারি, তিনি বাকপ্রতিবন্ধী।

‘বাস থেকে ফেলে দেয়ায় তিনি মাথা ও কোমরে আঘাত পান। পরে মার্কার পেন দিয়ে টাইলসের ওপর লিখে ঘটনার বর্ণনা করেন। তার লেখা থেকে বুঝতে পারি, ভাড়া না থাকায় তাকে ফেলে দেয়া হয়েছে।’

কাইয়্যুম মাহমুদ আরও বলেন, ‘বাকপ্রতিবন্ধী ওই নারী প্রায়ই এন মল্লিক বাসে ভ্রমণ করেন। এন মল্লিকের কোনো এক কর্মকর্তা তার বাস ভ্রমণের ভাড়া মওকুফ করেছেন। তাই তিনি সব সময় বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করেন। সেদিন তিনি কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা থেকে বাসে ওঠেন।

‘তিনি তার কাছে ভাড়া নেই ও বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের অনুমতির বিষয়টি চিরকুটে লিখে হেলপারকে জানিয়েছিলেন। তবুও হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর আমি ভিডিওটা আমার ফেসবুকে শেয়ার করেছি।’

তিনি জানান, ঘটনার বর্ণনায় ওই নারী ফুটপাতের দোকানের সামনের টাইলসের ওপর লেখেন, ‘এন মল্লিক কোনাখোলা থেকে উঠাইসে। ভাড়া নাই। এন মল্লিক কোনোদিনও আমার থেকে ভাড়া নেয় না। এরা ভাড়া চায়। দিতে না পারায় এমুন ব্যবহার। এন মল্লিকের সবাই আমাকে চেনে। ও মনে হয় চিনে নাই। তাই বুজাবার চেষ্টা করসিলাম।’

এ বিভাগের আরো খবর