জনপ্রিয়তার কারণে যশোরের অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য নূর আলীকে গুলি মেরে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার স্বজনদের।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। একই হামলায় তিনটি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নূর আলীর আহত ছেলে ইব্রাহিম হোসেন। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত।
নূর আলী ও তার ছেলে রোববার রাত আটটার দিকে স্থানীয় বাবুরহাট বাজার থেকে মোটরসাইকেলে শুভরাঢ়া গ্রামের বাড়ির ফিরছিলেন। পথে বাজারের অদূরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নূর আলীর মাথায় গুলি বিদ্ধ হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার ছেলে ইব্রাহিমের শরীরে তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। তাকে খুলনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নূর আলীর স্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পাড়ার মুরাদ চার লাখ টাকা দিছে সন্ত্রাসীদের। ইকবাল, মুছা গাজী ও হুমায়ুন মোল্লা মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করছে। দলাদলি, ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাকে হত্যা করছে। আমার স্বামীর আর কোনো দোষ নাই। আমি হত্যকারীদের ফাঁসি চাই।’
নূর আলীর ভাই রুহুল আমিন শেখ বলেন, ‘আমার ভাই জনসেবা করতে গিয়ে খুন হলো। ও কালকে সকালেও আমাকে বলেছে, কিছু লোক ওকে খুন করতে চায়। মুরাদ ও মুসা দুইজনে মিলে টাকা দিছে। মুসা গাজী, হুমায়ন মোল্লা গিয়ে ইকবালকে টাকা দিয়া আসছে। আমি ভাইকে সাবধানে চলতে বলি। মুসা গাজী মেম্বর পদে দাঁড়াতে চায়। ওই আমার ভাইকে খুন করিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নূর আলী ব্যাপক জনপ্রিয় ইউপি সদস্য। আগামীতে ওকে হারানোর মতো কোনো প্রার্থী নেই। কারণ এই এলাকা সন্ত্রাসী এলাকা ছিল। আমার ভাই নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার সবাইকে নিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটিসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি ভালো করে। যে ডাকত, তার পাশেই যেয়ে দাঁড়াত। গরিবদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করত। এলাকায় ওর থেকে পয়সাওয়ালা লোক মুরাদ। তাকে কেউ মানে না। মুরাদ এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করে। তার বিরুদ্ধে অবস্থান থাকায় আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে।’
গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘মেম্বার সাহেব খুব ভালো লোক ছিলেন। এ এলাকায় সন্ত্রাসীদের কারণে আমরা ঘরে থাকতে পারতাম না। মেম্বার গ্রামের সবাইকে নিয়ে এলাকার পরিবেশ ভালো করেছে। তিন/চার বছর এলাকায় শান্তি বিরাজ করছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যে দুই গ্রুপ রয়েছে। একদল একটু ক্রিমিনাল। তাদের জন্যই আজকে এ হত্যাকাণ্ড।’
তবে ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিন বাবু বলেন, ‘নূর আলী শেখ অত্যন্ত জনপ্রিয় মেম্বার ছিলেন। তার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করতে। দলীয় কোন্দল নিয়েও বিরোধ ছিল। কিন্তু তার জন্য হত্যা হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তবে ঘটনার সময় নূর আলীর ছেলে আহত হয়েছেন। তিনি সুস্থ হলেই বোঝা যাবে, কারা এর সাথে জড়িত।’
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে এ হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে কাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে, এ বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।
নূর আলী শেখ ভ্যানচালক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ রাতভর পুরো এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আশা করছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’