হলে থাকা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশের অনড় অবস্থানের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে রফিক-জব্বার, সালাম-বরকত ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সিলগালা করে দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই ক্যাম্পাসে প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। এ সময় হলে থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরে গেরুয়া গ্রামে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অ স ম ফিরোজ উল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ্যাক্সটলি আমার কাছে অতো ডিটেইল তথ্য আসেনি। প্রভোস্টরা এখনও হলে হলে কাজ করছেন। আমার কাছে তিনটি হলের তথ্য এসেছে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শহিদ সালাম-বরকত ও রফিক-জব্বার হল সিলগালা করা হয়েছে। এই তিনটা হলের খবর পেয়েছি। বাকি হলগুলোও খালি হচ্ছে।’
শহীদ রফিক জব্বার হলের নিরাপত্তাকর্মী সোহেল রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই হলে চার জন ছাত্র ছিল। বিকালে প্রভোস্ট স্যাররা হলে এসে তাদের বোঝালে তারা চলে যায়।’
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নিরাপত্তাকর্মী মো. ইয়াসিন বলেন, ‘হল তালা ভাইঙ্গা ছাত্রীরা কালকে ঢুকছিল। রাত্রে ছিল ওনারা হলে। আজ সকালে স্যাররা আসছে। আইসা ছাত্রীদের হল থাইকা বের কইরা দিয়া তালা দিয়া স্যাররা চইলা গেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট এলাকায় বিকেল ৫টায় প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ।
সেখানে এ অংশের সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সিরাজুল হক লিখিত বক্তব্য পড়েন।
তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন শুধুমাত্র মঙ্গলবার স্থগিত করা হয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করার ব্যাপারে অনঢ়। নিরাপত্তাহীনতার জন্য এ ব্যাপারে আমরা যে কোনো ধরনের আপোষে অনাগ্রহী। কোনো অবস্থাতেই আগের দাবিগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না।
‘আমাদের এই আন্দোলন যে কোনো পক্ষের ঊর্ধ্বে একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। আমরা একত্রিত থেকে আন্দোলন সফল করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। সবাইকে আমাদের আন্দোলনে এক হয়ে অংশগ্রহণের অনুরোধ করছি।’
গত শুক্রবার ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী গেরুয়া গ্রামের স্থানীয় লোকজনের হামলার শিকার হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। শনিবার তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের সই করা এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশ যারা মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয় প্রশাসন।
তবে সোমবারও হলে থাকাসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে অনড় থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এদিন সকালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন মেয়েরা।
একইদিন সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, আগামী ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেয়া হবে। ক্লাস শুরু হবে ২৪ মে থেকে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সোমবারও হলেই ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে মঙ্গলবার দুপুরে হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
সংগঠনের পক্ষে গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হিমাদ্রি শেখর বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলার পর কালকে রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নির্দেশনা আসছে যে, হলে থাকা যাবে না। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা ছাত্রলীগ করি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অমান্য করার সুযোগ নেই আমাদের। ওই নির্দেশনায় হয়ত কিছু সময়ের মধ্যে আমরা জাবি শাখা ছাত্রলীগ হল ছেড়ে দেব।’
এ সময় তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও হল ছাড়ার আহ্বান জানান।