সিলেট নগরীর উপকণ্ঠ বিআইডিসি এলাকার বাসায় সৎ মা ও ভাই-বোনকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ছেলেকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে শিশু আদালতের বিচারক বজলুর রহমান এ আদেশ দেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেটের প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শিশু আদালতে ওই কিশোরের বিচার শিশু আইন ও জাতীয় শিশু সুরক্ষানীতি মেনে চলবে। এই বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে শিশু আইন নির্দেশিত সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন।
গ্রেপ্তার ওই কিশোরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সনদ অনুযায়ী বয়স ১৭ বছর এক মাস। অথচ পুলিশ কোনো প্রমাণপত্র ছাড়াই তার বয়স ১৯ বছর নির্ধারণ করে তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল।
তবে শনিবার আদালতে ওই কিশোর জবানবন্দিতে তার বয়স ১৭ বছর বলে জানানোয় তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে দেয়া হয়।
সোমবার ওই কিশোর নিজের বয়সের প্রমাণপত্র হাজির করলে আদালত তাকে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) সিলেটের সমন্বয়ক আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন,‘অপরাধীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়, তাহলে শিশু আইন ও শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শাহপরান থানা পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বিআইডিসি এলাকার মীরমহল্লার বাসা থেকে রুবিয়া বেগম চৌধুরী, তার মেয়ে জান্নাতুল হোসেনের মরদেহ এবং আহত অবস্থায় ছেলে তাহসান হোসেন খানকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই কক্ষ থেকে রক্তমাখা ছুরিসহ রুবিয়ার সৎ ছেলেকে আটক করে পুলিশ।
পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাহসান।এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবিয়ার ভাই আনোয়ার হোসেন ওই কিশোর ও তার মায়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
গত শনিবার দুপুরে মহানগর পুলিশ ওই কিশোরের নাম ও পরিচয় দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কিশোরের বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়।
তবে ওই কিশোরের বাবা দাবি করেন, তার ছেলের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতেও ওই কিশোর বলে তার বয়স ১৭ বছর।
১৭ বছর বয়সী কিশোরের বয়স মামলার এজাহারে ১৯ বছর নির্ধারণ করা প্রসঙ্গে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ‘পরিবার ও প্রতিবেশীদের দেয়া তথ্যমতে ওই আসামির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তার বয়সের কোনো প্রমাণপত্র পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ছেলেটিকে দেখে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি মনে হচ্ছিল।’
প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো প্রমাণপত্র ছাড়া এক জন কিশোরের বয়স নির্ধারণ করে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো আইনসিদ্ধ না। শাহপরান থানা–পুলিশের ‘শিশু ডেস্ক’ এর মাধ্যমে ওই কিশোরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদপত্র প্রমাণ হিসেবে শিশু আদালতে জমা দিলে বিচারক এ আদেশ দেন।’
মঙ্গলবার ওই কিশোরকে টঙ্গীর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
- আরও পড়ুন: সিলেটে সৎ মা-বোনকে কুপিয়ে হত্যা
- আরও পড়ুন: সৎভাইয়ের কোপে মা-বোনের পর শিশু তাহসানেরও মৃত্যু
- আরও পড়ুন: ‘নির্যাতনের কারণে’ সৎমা ও ভাইবোনকে হত্যা
- আরও পড়ুন: সৎ মা-ভাইবোনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, আসামি ২