সাভারে ব্যাংক কলোনি এলাকায় রোহানুর ইসলাম রোহান নামের এক তরুণকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে।
রোববার সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হামিদ নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি দুপুরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে রোহানকে মারধর ও হত্যার দৃশ্য ধরা পড়েছে সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনি এলাকার অ্যালাইড ক্যাডেট স্কুলের একটি সিসিটিভিতে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ব্যাংক কলোনির অ্যালাইড স্কুলের সামনের মুড়ি মটকা নামের একটি রেস্তোরাঁর সামনে রোহানকে প্রথমে মারধর করে তার সহপাঠী হৃদয়সহ বেশ কয়েক জন। কিছুক্ষণ পরে ২০-৩০ জন কিশোর সংঘবদ্ধ হয়ে তাকে মারতে থাকে। মারতে মারতেই তাকে রেস্তোরাঁর গলি থেকে বের করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই ছুরিকাঘাতে আহত রোহানকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে আবারও ওই রেস্তোরাঁর সামনে আনে আরেক কিশোর। পরে তারাই রোহানকে একটি অটোরিকশায় তোলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি মো. আহাজার বলেন, ‘বিকাল টাইমে ওই মুড়ি মটকা দোকানে অনেক ভিড় হয়। পরে দেখি সন্ধ্যার দিকে হইহুল্লা বাড়ছে। তখন দেখলাম অনেকগুলা ছেলে ভিতরে একজনকে ঘেরাও করে ধরে মারতেছে। তবে কাউকে চিনি নাই। আমি তাড়াতাড়ি গ্যানজাম দেইখা দোকানের মাল ভিতরে ঢুকায়া বাসায় গেছি। পরে শুনলাম একজনরে মাইরা ফেলাইছে।
গ্রেপ্তার হৃদয়‘ওই দোকানে অনেক ইয়াং (তরুণ) কাস্টমার আসে। গ্যাদারিং (ভিড়) হয় অনেক। রাস্তায় হোন্ডা (মোটরসাইকেল), চেয়ার-টেবিল বসায় দিয়া মুড়ি খায়। আশপাশের কেউ কিছুই বলে না।’
নিহত রোহানের মামা মো. রবিন বলেন, ‘কালকে বিকেলে আমি রোহানেরে ফোন দিছিলাম বাসায় আইসা পিঠা খাওয়ার জন্য। ও (রোহান) আমারে বলছে, ও আসতেছে। তারপরে শুনলাম সিয়াম আর ওর আরও দুইটা বন্ধু অ্যালাইড স্কুলের ওইখানে মুড়ি মটকা দোকানে মুড়ি খাইতে গেছিল। তার কিছুক্ষণ পরেই শুনলাম ওরে কারা যেন মারছে। আমার ছোট ভাই হাসপাতালে গিয়া দেখে রোহান আর নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিসিটিভিতে দেখলাম, আমার ভাগিনা ভয়ে দোকানে আশ্রয় নিতে যাইতেছিল। দোকানদার ওরে সেখানেও ঢুকতে দেয় নাই। এখানে মানুষ যারা ছিল আমার ভাগিনাকে কেউ বাঁচাতে আসে নাই। অনেকেই চেষ্টা করলে পারতো। ওরা এখানে মারার পরেও প্রায় ১০-১৫ মিনিট এখানে অবস্থান করছে। আমার ভাগিনার জান যতক্ষণ না বের হইছে ততক্ষণ ওরা যায় নাই।’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত হৃদয় নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার রাতে রোহানুরের বাবা আব্দুস সোবহান ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের তরুণকে আসামি করে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামীকাল গ্রেপ্তার হৃদয়ের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহত রোহানুর ইসলামরোহান পৌরসভার উলাইল কর্ণপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহানের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
ওসি এফএফ সায়েদ জানান, রোহান ওই রেস্তোরাঁয় মুড়ি খেতে গিয়েছিল। সেখানে তাকে পূর্বশত্রুতার জেরে ছুরিকাঘাত করা হয়। রাত সাড়ে ৮টায় এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
- আরও পড়ুন: মুড়ি খেতে গিয়ে বন্ধুদের হাতে তরুণ খুন