মৃত কিশোরীকে নিয়ে ধর্মের বিতর্কের অবসান ঘটল। আদালত সিদ্ধান্ত দেয়ার পর মেয়েটিকে নিজস্ব ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সৎকার করতে নিয়ে গেছেন বাবা।
মেয়েটি পালিয়ে বিয়ে করেছিল বলে তদন্ত সংস্থা পিবিআইএর দাবি খারিজ করে দিয়েছে কক্সবাজারের একটি আদালত। বিচারক বলেছেন, ১৫ বছর বয়সী কিশোরীর ধর্ম পাল্টানো বা বিয়ে-দুটিই অবৈধ।
কক্সবাজার টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া শিলখালী চাকমাপাড়ার ১৫ বছর বয়সী লাকিং মে চাকমার মারা গিয়েছিল তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে; গত ১০ ডিসেম্বর।
এরও এক বছর আগে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়েছিল সে। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচারক তদন্তের দায়িত্ব দেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, পিবিআইকে।
আদালতের রায়ের পর লাকিং মের মরদেহ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মাছয় মাস পর পিবিআই প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, লাকিং মে অপহৃত হয়নি। নিজের ইচ্ছায় ঘর ছেড়েছে।
লাকিং মে এই কয়েক মাস ছিল কুমিল্লায়।
মেয়েকে না পেয়ে শোকাতুর পরিবারটি ১০ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই আব্দুল হালিমের কাছ থেকে ফোন পায়। তবে পুলিশের তথ্যে শুরু হয় কান্না। তারা জানতে পারে, আদরের মেয়েটি আর নেই।
বাবা মা ছুটে যান হাসপাতালে। কিন্তু নিথর সন্তানকে নিয়ে আসতে বাধা। তারা জানতে পারেন, স্বামী দাবি করে বাধ সেধেছেন এক যুবক। আতাউল্যা নামে ওই যুবকের দাবি, ওই কিশোরী মুসলমান হয়েছেন। তাই মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে হবে সৎকার।
এই অবস্থায় প্রশাসন পড়ে বেকায়দায়। ঘটনাটি গড়ায় আদালতে।
তবে মেয়েটির বাবা এই তদন্তে নারাজি দেন। তিনি বলছেন, ১৪ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে হতে পারে না আইন অনুযায়ী।
দুই পক্ষের টানাটানি আর আইনি জটিলতা কাটিয়ে ২৫ দিন পর বাবার কাছে হস্তান্তর হলো লাকিং মের মরদেহ।
সোমবার বিকেল তিনটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে রামুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হবে শেষকৃত্য।
সকাল থেকে বসে থাকার পর মর্গের ফ্রিজের খরচ বাবদ ২৪ হাজার টাকা দিতে না পারায় আরও দুই ঘণ্টা মরদেহ দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তদন্ত সংস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে টাকা পরিশোধের পর তা হস্তান্তর করা হয়।
মর্গে ২৫ দিন মরদেহ রাখায় ২৪ হাজার টাকা বিল করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষমরদেহ হস্তান্তরের পর র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অর্জুন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু মেয়েটির বয়স ১৫ বছর সেহেতু তার ধর্মান্তরিত হওয়া বা বিয়ে- দুটিই অবৈধ। তাই তার লাশ বাবা লালা অং চাকমার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
কিশোরীর বাবা লালাং চাকমার আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা লাকিংমে লাশ মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। আদালত তার (লাকিং মে) স্কুল সার্টিফিকেট ও জন্ম নিবন্ধন সনদ বিবেচনা করে লাশ মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করতে র্যাবকে নির্দেশ দেয়।’