৩১ বছর আগে আলোচিত সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ পিছিয়েছে।
এ মামলায় গ্রেফতার আসামিদের আইনজীবীরা সময়ের আবেদন করলে সোমবার তা গ্রহণ করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। নতুন তারিখ অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হবে।
সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন, শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান, মো. মারুফ রেজা এবং মো. মিন্টু এ মামলার আসামি। তবে মিন্টুর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগ গঠনের সময় তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন জানাবে রাষ্ট্রপক্ষ। মিন্টু এখন পলাতক।
আদালতে সোমবার শুনানিতে আসামি মারুফ রেজার আইনজীবী দেওয়ান আব্দুন নাস দাবি করেন, ঘটনার সময় মারুফের বয়স ছিল ১৮ বছরের কম। এ কারণে শিশু আদালতে মারুফের বিচারের আবেদন জানানো হয়। আবেদনটি পরের তারিখে শুনানির জন্য রেখেছেন বিচারক।
গ্রেফতার চার আসামির মধ্যে আনাছ ও মারুফের উপস্থিতিতে বেলা ১১টার দিকে শুনানি শুরু হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে জানান, মামলার নথিপত্র না পাওয়ায় শুনানির জন্য তাদের সময় প্রয়োজন।
শুনানিতে সাগিরা মোশেদের স্বামী ও মামলার বাদি আব্দুস সালামের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শহিদুল ইসলাম সরদার ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাকে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান সগিরা।
ঘটনার প্রায় ৩০ বছর পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে, ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত হত্যা। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে খুন করা হয় সগিরাকে। আর এতে সরাসরি জড়িত সগিরার ভাসুর ও তার স্ত্রী।
সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) এবং মো. মারুফ রেজা (৫৯) হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। বর্তমানে আবাসন ব্যবসায়ী ও বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে। ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলেও মামলায় অভিযোগপত্রে তখন তাকে বাদ দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক দুজনের কথা বললেও মো. মিন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
এরপর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফের নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার বিচারিক আদালত।
তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রিভিশন আবেদন করলে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- জানাতে রুল দেয় হাইকোর্ট। পরের বছর ২৭ আগস্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
দীর্ঘদিন পরে বিষয়টি নজরে এলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর গত বছরের ২৬ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ অধিকতর তদন্তের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে। সেই সঙ্গে অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয় আদালত। পরে গত বছরের নভেম্বরে চার আসামিকে গ্রেফতার করে পিবিআই।