বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মদে লবণ মেশালে কি সিরকা হয়?

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:০৩

অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়র মধ্যে শুধু গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি ওয়াইন ও বিয়ার থেকেই ভিনিগার তৈরি সম্ভব। পাতন করা (ডিসটিলড) অ্যালকোহলকে (যেমন ব্র্যান্ডি, হুইস্কি, রাম, জিন, ভদকা) কখনোই ভিনিগারে পরিণত করা সম্ভব নয়। লবণ দিয়েও এ কাজে সফলতার কোনো সুযোগ নেই।

ইসলামি বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর একটি বক্তব্যের কিছু অংশ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে তিনি দাবি করেছেন, মদের মধ্যে লবণ যোগ করলে সেটি আর মদ থাকে না, সেটি সিরকা বা ভিনিগারে পরিণত হয়।

মদ বা অ্যালকোহল লবণের সংস্পর্শে ভিনিগারে পরিণত হতে পারে কি না, তা যাচাই করেছে নিউজবাংলা। রসায়নবিদদের মতামত নেয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, লবণের সাহায্যে মদের সিরকায় পরিণত হওয়ার কোনো নজির নেই, রাসায়নিকভাবে এটি ঘটা সম্ভবও নয়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ওয়াইন থেকে ভিনিগার তৈরি করা যেতে পারে, তবে এতে লবণের কোনো ভূমিকা নেই।

অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়র মধ্যে শুধু গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি ওয়াইন ও বিয়ার থেকেই ভিনিগার তৈরি সম্ভব। তবে পাতন করা (ডিসটিলড) অ্যালকোহলকে (যেমন: ব্র্যান্ডি, হুইস্কি, রাম, জিন, ভদকা) কখনোই ভিনিগারে পরিণত করা সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি.এইচ. চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ওয়েবসাইটে ভিনিগারের রাসায়নিক গঠন ও উপযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এতে বলা হয়, ভিনিগার শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘ভিন আইগ্রে’ বা টক ওয়াইন থেকে। খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৫ হাজার বছর আগে ব্যাবিলনে এটি রান্নার পাশাপাশি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং সুস্থতার জন্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। খাদ্য সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হতো ভিনিগার।

লোককথা অনুযায়ী, কোনো এক ব্যক্তি একবার ভুল করে এক বোতল ওয়াইন কয়েক মাস স্টোর রুমে রেখে দিয়েছিলেন। এরপর গাঁজন প্রক্রিয়ায় এটি টক স্বাদের ভিনিগারে পরিণত হয়।

ভিনিগারের রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে হার্ভার্ড টি.এইচ. চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ বলছে, এটি অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং পানির সংমিশ্রণ, যা দুই ধাপের গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।

প্রথমত, ইস্ট চিনি অথবা ফল বা ধান-গমের মতো খাদ্যশস্যের তরল স্টার্চকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তরল অ্যালকোহলে পরিণত করে। এরপর এই অ্যালকোহল অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিটোব্যাক্টর প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে আবার গাঁজন করে। এর মাধ্যমে তৈরি হয় ভিনিগার।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভিনিগারে কমপক্ষে ৪ শতাংশ অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকার বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে সাধারণভাবে ব্যবহৃত ভিনিগারে এর মাত্রা ৮ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

ভিনিগারে রয়েছে ট্রেস ভিটামিন, খনিজ লবণ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং পলিফেনলিক যৌগ। এগুলোর পরিমাণের ভিত্তিতে ভিনিগারের স্বাদ টক থেকে মিষ্টি পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যদিকে ব্রিটানিকা ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, মদ বা অ্যালকোহল হলো অ্যালকাইল গ্রুপের (হাইড্রোকার্বন চেইন) কার্বন পরমাণুর সঙ্গে সংযুক্ত এক বা একাধিক হাইড্রক্সিল (-OH) গ্রুপের একটি শ্রেণি।

অ্যালকোহলকে পানির (H2O) একটি উপজাত হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। কারণ এ ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পরমাণুর একটি অ্যালকাইল গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যেমন: ইথানল বা ইথাইল অ্যালকোহল (CH2CH3)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্র্যান্ডি, হুইস্কি, রাম, জিন বা ভদকায় অ্যালকোহলের মাত্রা অনেক বেশি। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিসটিলড অ্যালকোহলে এর মাত্রা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। এ জন্যই ডিসটিলড অ্যালকোহলকে ভিনিগারে পরিণত করা অসম্ভব। কারণ বেশি মাত্রার অ্যালকোহল গাঁজনের মূল উপাদান ইস্টকেই মেরে ফেলে

তবে ওয়াইনে অ্যালকোহলের মাত্রা কম এবং পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বলে এই পানীয় দিয়ে ভিনিগার তৈরি করেন অনেকে। প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে এ ক্ষেত্রেও লবণের কোনো ভূমিকা বা ব্যবহার নেই। খাবার লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের (NaCl) আদৌ কোনো বিক্রিয়াই ঘটে না অ্যালকোহলের সঙ্গে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মদের (অ্যালকোহল) সঙ্গে লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) মেশানো হলে তা ভিনিগার বা সিরকা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অ্যালকোহল বা মদের মধ্যে ৪০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি পরিমাণ অ্যালকোহল থাকে, বাকিটা থাকে পানি। আর সেখানে লবণ মেশানো হলে তা পানির সঙ্গে মিশে স্যালাইনড টেস্ট বা নোনা স্বাদ তৈরি করতে পারে, তার বেশি কিছু নয়।’

রসায়নের এই শিক্ষক বলেন, ‘এমনকি ওয়াইনের সঙ্গে লবণ মেশালেও তা ভিনিগার হবে না। তা করা হলে বড় জোর নোনা স্বাদ আসতে পারে।’

রাসায়নিক কৌশলে ওয়াইন থেকে ভিনিগার তৈরি সম্ভব জানিয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তবে সেটিও অনেক সময়সাপেক্ষ।

‘এটা করতে গেলে প্রথমে ওয়াইন থাকা ইথানলকে অক্সিডাইট করতে হয়। তারপর এলড্রিহাইট করে ভিনিগার পাওয়া সম্ভব. কিন্তু এটি খুব দীর্ঘ প্রক্রিয়া।’

তিনি বলেন, ‘অ্যালকোহল শত বছর পুরোনো হলেও তা নষ্ট হয় না। যৌগটি সেভাবেই থাকে, বাইরের প্রভাব খুব একটা একে প্রভাবিত করে না।’

এ বিভাগের আরো খবর