পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে, দেশটি ও প্রতিবেশী ভারতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আঘাত হানতে পারে বড় ধরনের ভূমিকম্প। এ গুজব আরও ডালপালা মেলে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে (এসএসজিইওএস) নামের একটি সংস্থার টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া পূর্বাভাসে।
এসএসজিইওএসের ৩০ জানুয়ারির এক টুইটে দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্পের আভাস দেয়া হয়। এতে বেগুনি দুটি রেখা টানা একটি মানচিত্রের ছবি সংযুক্ত করে লেখা হয়, বেগুনি রেখার মধ্যকার বা কাছাকাছি অঞ্চলে ১ থেকে ৬ দিনের মধ্যে শক্তিশালী ভূকম্পনজনিত ঘটনা ঘটতে পারে। বেগুনি রেখার বাইরের অঞ্চলও শঙ্কামুক্ত নয়।
ওই পূর্বাভাসের পর টুইটারে একই অ্যাকাউন্টে ২ ফেব্রুয়ারি আরেকটি ভিডিও পোস্ট করেন ডাচ ভূতত্ত্ববিদ ফ্র্যাংক হুগারবিটস। এতে তিনি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ সম্ভাব্য কিছু এলাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ভূকম্পনজনিত ঘটনা ঘটতে পারে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের আগে ‘সঠিক’ আভাস দেয়ায় অনলাইন ব্যাপক প্রশংসিত হন হুগারবিটস। সেই থেকে ভারত ও পাকিস্তানে সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে ডাচ এ গবেষকের ভিডিও শেয়ার করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা।
এসএসজিইওএসের টুইটার অ্যাকাউন্টে দেয়া পূর্বাভাস সত্য হতে পারে কি না, তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্প আগে থেকে আঁচ করা অসম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের মতে, ‘ইউএসজিএসের কিংবা অন্য কোনো বিজ্ঞানী কখনও বড় ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দেননি।’
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্দিষ্ট কয়েক বছরের মধ্যে কোনো এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে পারেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) মতে, ঠিক কখন এবং কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটা আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প কতটা ব্যাপক হবে, তা নিয়েও পূর্বাভাস দেয়া যায় না।
দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানে ভূমিকম্প নিয়ে হুগারবিটসের ভিডিওর সমালোচনা করেছেন গবেষকরা। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ অরেগনের ভূপদার্থবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডিয়েগো মেলগার এক টুইটে মজা করে লিখেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে একে বলি ‘সর্ব রোগের মহৌষধ’। এটাকে ‘হাতুড়ে’ হিসেবেও আখ্যা দেয়া যেতে পারে।”