ইউক্রেনে প্রতিবেশী রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইইউ মস্কোয় নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে লিথুয়ানিয়া। টুইটারে সম্প্রতি শেয়ার হওয়া এমন একটি পোস্ট নেট দুনিয়ায় আলোচনায় ঝড় তুলেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পোস্টটি ভুয়া। যদিও ইইউর নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে কালিনিনগ্রাদে কিছু পণ্য আটকে দিয়েছিল লিথুয়ানিয়া, তবে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পোস্টে যে ভিডিও ব্যবহার হয়েছে, সেটি আসলে ইউক্রেনে হামলার কয়েক বছর আগের। এস্তোনিয়ায় রেলওয়ে মেরামতের ছবিটি ২০১৭ সালে পোস্ট হয়েছিল। কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে লিথুয়ানিয়া রেলওয়ে লাইন অপসারণের বিষয়ে সরকারি কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
‘লিথুয়ানিয়া রেলওয়ে লাইনটি তুলে ফেলেছে, যেটি রাশিয়াকে কালিনিনগ্রাদের সঙ্গে যুক্ত’ চীনা অক্ষরে এই শিরোনামে টুইটটি করা হয়েছিল।
ভিডিওটি চলতি বছরের ৬ জুলাই শেয়ার হওয়ার পর থেকে ৪১ হাজার বার দেখা হয়েছে। ২৮ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রমিকরা সরঞ্জাম নিয়ে একটি রেলওয়ে লাইনের কিছু অংশ মাটি থেকে তুলে ফেলছে এবং একটি গাড়িতে রাখছে।
ভিডিওটির বিবরণে চীনা ভাষায় লেখাটি বাংলা করলে দাঁড়ায়, “রাশিয়াকে পাল্টা জবাব দিয়েছে লিথুয়ানিয়া।
‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও আলোচনা করছে কীভাবে রাশিয়ার মালবাহী সীমিত সংখ্যায় দেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া যায়। তবে এ বিষয়ে লিথুয়ানিয়া অসন্তুষ্ট। তারা কালিনিনগ্রাদ পর্যন্ত রেলপথটি তুলে ফেলতে শুরু করেছে।’
মস্কো থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার (৬২০ মাইল) দূরের বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত কালিনিনগ্রাদ। এটি ইউরোপে অত্যন্ত কৌশলগত রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি।
গত জুনে লিথুয়ানিয়া ইইউ নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে কালিনিনগ্রাদগামী কিছু পণ্য রেলপথে আটকে দেয়।
ইইউ এ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ছয়টি নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে; যার মধ্যে ২০২২ সালের জুনের শুরুতে অনুমোদিত বেশির ভাগ রাশিয়ান তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যাই হোক, ভিডিওটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কয়েক বছর আগের।
বিপরীত চিত্র এবং কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর ইউটিউবে পুরো ভিডিওটি আপলোড হয়েছিল।
রাশিয়ান এবং ইংরেজিতে ক্যাপশনে লেখা, “রেলওয়ের ১/৮ অংশে মেরামত চলছে, পুরোনো লাইন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, এস্তোনিয়া ২০১৭।”
বিভ্রান্তিকর পোস্টে শেয়ার করা দৃশ্যগুলো ওই ভিডিওর ৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের।
নিচে বিভ্রান্তিকর ভিডিওটির দুটি স্ক্রিনশট তুলনা করা হলো। বাঁয়ে ভুয়া ছবি, ডানে আসল ইউটিউবের ভিডিওর ছবি।
ইউটিউব চ্যানেলের পরিচালক মার্টিন কুস্ক নিশ্চিত করেছেন, কয়েক বছর আগে এস্তোনিয়াতে ভিডিওটি চিত্রায়িত হয়েছিল।
কুস্ক ই-মেইলে লেখেন, ভিডিওটি আসলে ২০১৭ সালে এস্তোনিয়ায় রেললাইন মেরামতের সময় করা হয়েছিল। ৪২ মিনিটের ভিডিওটি ১৯ অক্টোবর আপলোড হয়েছিল।
লিথুয়ানিয়া কিছু পণ্যের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর কালিনিনগ্রাদের সঙ্গে তার রেলসংযোগ সরিয়ে নিচ্ছে, কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে এ বিষয়ে সরকারি কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।