সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাত ধরনের সমন্বিত শরীরচর্চার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কারণ এ সময়ের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক করোনাভাইরাস থেকে আজীবন সুরক্ষা মিলবে এ শরীরচর্চায়, এমন দাবি করা হয়েছে ভিডিওটিতে।
ভারতের মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রের চিফ মেডিক্যাল হেলথ অফিসার ড. মনীষ শর্মাকে ভিডিওটিতে বলতে শোনা যায়, 'প্রত্যেককে আমি এই সাতটি শরীরচর্চা করতে অনুরোধ করছি। এতে আপনাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনার দেহ প্রস্তুত হয়ে উঠবে। এই শরীরচর্চাগুলো নিয়মিত করলে আপনি কোনোদিনই করোনায় আক্রান্ত হবেন না। খুব সহজ এই শরীরচর্চাগুলো আপনি যখন তখন, যেখানে খুশি করে ফেলতে পারেন। প্রতিটি ব্যায়াম করতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ড।'
এরপর ভিডিওতে হাতের সাত ধরনের ব্যায়াম করে দেখান ড. শর্মা। সবশেষে তিনি বলেন, 'দিনের যে কোনো সময়ে যেখানে খুশি, সেখানেই এই শরীরচর্চাটি করে নিন এবং করোনামুক্ত থাকুন।'
পরবর্তীতে ফেসবুকের এক ব্যবহারকারী পোস্টটি শেয়ার করেন এবং ক্যাপশনে হিন্দিতে লেখেন, 'করোনাকে ভয় পাওয়ার আর কোনো দরকার নেই। মাত্র ৩০ সেকেন্ড আর সাতটি ব্যায়াম করুন ড. শর্মার পরামর্শে।'
আরেকটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি দেখেছেন ২০ লাখের বেশি মানুষ, সময়ের সঙ্গে বাড়ছে এ সংখ্যা।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে। পত্রিকাটির ভুয়া সংবাদবিরোধী বিভাগ এএফডব্লিউএ বলছে, এই সাতটি ব্যায়ামে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল ভিডিওটিতে যা বলা হয়েছে, সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
কী জানা গেছে অনুসন্ধানে?
গত বছরের অক্টোবর মাসে ভিডিওটি প্রথম ভাইরাল হয়। সে সময় এ বিষয়ে ড. শর্মাকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয় মধ্য প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিডিওটিতে দেয়া তথ্য বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য। একই সঙ্গে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ নেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও রাজ্য সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এটি।
মধ্য প্রদেশ স্বাস্থ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ক নথির ৭৬ নম্বর পৃষ্ঠায় পূর্ণ বিজ্ঞপ্তিটি দেখা যাবে।
এই সাত শরীরচর্চা করলেই করোনার বিরুদ্ধে আজীবন সুরক্ষা মানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দরকার নেই বলে ধারণা ছড়াতে পারে, এমন উদ্বেগ কর্তৃপক্ষের।
এ অবস্থায় ড. শর্মা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও নিয়মিত হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।
মহামারির শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিদরা বলে আসছেন, এ ধরনের তথ্যে বিশ্বাস না করাই মঙ্গল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, বিশ্বজুড়ে বিপুলসংখ্যক বিজ্ঞানো করোনাভাইরাসের চিকিৎসা আবিষ্কারে কাজ করছেন।
রোগটি প্রতিরোধে ভারতে কোভ্যাকসিন, কোভিশিল্ড ও স্পুৎনিক টিকায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও এর কোনোটিই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শতভাগ কার্যকর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন বলছে, করোনার বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলা দীর্ঘদিনের কাজ। আগে থেকে নিয়মিত যোগাসন, ধ্যানসহ নানারকম শরীরচর্চার দীর্ঘ অভ্যাস দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচায়।
কিন্তু হুট করে হাতের এই সাত ধরনের ব্যায়াম করোনা প্রতিরোধে সাহায্য করবে, এমন কোনো গবেষণা প্রতিবেদনের অস্তিত্ব নেই।
এ বিষয়ে ড. শর্মার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।