কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন হাসপাতালে যাওয়ার পথে চেকপোস্টে এক চিকিৎসককে ‘কসাই’ বলে সম্বোধন করার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় পুলিশের একটি চেকপোস্টে বুধবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মমিনুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক। তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইনডোর অফিসার (ইউরোলজি বিভাগ) হিসেবে কর্মরত। চলতি সপ্তাহে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালটির কোভিড ইউনিটে।
মমিনুলের অভিযোগ আট দিনের কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম সকালে গ্রিন রোডের বাসা থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক পুলিশ সদস্য তাকে হেনস্তা করেছে।
তবে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় দায়িত্বপালনকালে এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানা নেই তাদের। তবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তারা।
চেকপোস্টে হেনস্তার শিকার হওয়ার বিষয়টি ডাক্তার মমিনুল ইসলাম তার নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন। পরবর্তী সময়ে মমিনুলের সঙ্গে নিউজবাংলা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের এমন আচরণে আমি মর্মাহত। এমনটি কখনোই প্রত্যাশা করিনি।’
চিকিৎসক মমিনুল ইসলাম
ফেসবুক পোস্টে মমিনুল লিখেছেন, ‘আজ (বুধবার) সকালে সিএনজি নিয়ে করোনা হাসপাতালে ডিউটিতে যাবার সময় জাহাঙ্গীর গেটে পুলিশ আটকালে পরিচয় দিই, হাসপাতাল আইডি দেখালে পুলিশ বলে- কসাইগিরি ফলাস, তোর কসাইগিরি বাইর করতেছি, লাত্থি দিয়া পা ভাইঙা দিমু..... আরও কিছু ভাষা যা লেখার যোগ্য নয়....। মনে হলো যোগ্য সম্মান টাই পেলাম। এ অবস্থায় ডিউটি নিয়ে করনীয় কি? জানতে চাই।’
তার এই ফেসবুক পোস্টের পর চিকিৎসকদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
চেকপোস্টে হেনস্তার শিকার প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে ডা. মমিনুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকে সকালে করোনা ইউনিটে আমার ডিউটি ছিল। গ্রিন রোডের বাসা থেকে সিএনজিতে করে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে ফার্মগেট ও অন্যান্য জায়গায় পুলিশ সিএনজি আটকালে পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
‘যথারীতি জাহাঙ্গীর গেট চেকপোস্ট অনেকগুলো গাড়ির সঙ্গে আমি যে সিএনজিতে ছিলাম সেটাও আটকায়। অনেকগুলো গাড়ি আটকানোর কারণে ওই চেকপোস্টের জ্যাম লেগে ছিল। আমার ডিউটি ছিল ৯টা থেকে। চেকপোস্টের যখন পৌঁছাই তখন প্রায় আটটা ৫০ মিনিট। সামনে জ্যাম দেখে আমার সিএনজির পাশে থাকা পুলিশ সদস্যকে আমার পরিচয় দেই এবং দ্রুত যেতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানাই।’
মমিনুল বলেন, ‘কথাগুলো দুইবার বলার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পুলিশের ওই সদস্য। তিনি বলে ওঠেন- “ডাক্তারি করতে যাও না, কসাই গিরি করতে যাও”। এসব কথা বলছে। আমার সিএনজি ড্রাইভারকে বলছে লাথি মেরে পা ভেঙে ফেলবে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে পাশেই থাকা এমপি চেকপোস্টের সেনাবাহিনীর সদস্যদের আমার পরিচয় দিয়ে দ্রুত যাওয়ার প্রয়োজন বিষয়টি জানালে তারা পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’
চিকিৎসক মমিনুল ইসলামের ফেসবুক পোস্ট
জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় ওই চেকপোস্টটিতে বুধবার দায়িত্ব পালনে ছিলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের আমরা স্যালুট দিয়ে পার করে দিয়েছি, কারণ তারা প্রথম সারির যোদ্ধা।’
হেনস্তা হওয়ার বিষয়ে ওই চিকিৎসককে লিখিত অভিযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ওই চেকপোস্টে এসে পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘শনাক্ত করে দিলে ঘটনাটির তদন্তে আমাদের সুবিধা হবে।’
নিজেও চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে চিকিৎসকদের প্রতি তার নিজের এবং অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের একটা সম্মানবোধ আছে বলে দাবি করেন মঞ্জুর মোর্শেদ।
এই ধরনের ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘হঠাৎ করে পুলিশের একজন সদস্য চিকিৎসককে কসাই বলছে এটা শুনতেই অস্বাভাবিক লাগে। আমি নিজেও ওই চেকপোস্টে দীর্ঘক্ষণ ডিউটিতে ছিলাম। চিকিৎসক যারা পেছনের লাইনে থেকে পরিচয় দিয়ে বলেছেন তাদের সম্মানের সঙ্গে পাস দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছি। তারাই তো আমাদের শেষ ভরসাস্থল।’
চিকিৎসক মমিনুল ইসলামের অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বলে জানান অতিরিক্ত উপকমিশনার মঞ্জুর মোর্শেদ। বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ঘটনাটি অনুসন্ধান করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।’