ছাত্রশিবিরের নামে রগ কাটার যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে কোনো নথি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ। তিনি বলেছেন, বরং গুগলে সার্চ করলে রগ কাটার সব অপরাধ ছাত্রলীগের নামে পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ফরহাদ।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি রগ কাটা লিখে গুগলে সার্চ করলে দেখবেন সব অপরাধ ছাত্রলীগের নামে। শিবিরের নামে কোনো নথি আপনি পাবেন না। বিগত সরকার বার বার বলে এই ন্যারেটিভ এস্টাবলিশ করেছে।’
বিগত সরকার কেন এটি করেছে প্রশ্নে ফরহাদ বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন তারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েমের কিছু ব্যারিয়ার দেখে। প্রথমটি হল দেশপ্রেমিক সেনা সদস্য। বিডিআর বিদ্রোহের নামে তাদের হত্যা করা হয়।
‘তারপর ফ্যাসিবাদ কায়েমের সবচেয়ে শক্তিশালী বাধা মনে করেছে ছাত্রশিবিরকে। এরপর অ্যাটাক আসে শিবিরের ওপর। এমন কোনো লেয়ার নেই যেই লেয়ারে শিবিরের ওপর হামলা হয়নি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো বিষয়ে হ্যাঁ বা না বলার অধিকার বা কাউকে অ্যাকসেস দেয়া-না দেয়ার অধিকার কেবল সিন্ডিকেট, সিনেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের রয়েছে। এই তিনটি অর্গানের কোনোটিতেই শিবির নিষিদ্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে পরিবেশ পরিষদ কারও বিষয়ে একমত হলো কি হলো না সেটির কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
আত্মপ্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, ‘পতিত সরকার আমাদের বিষয়ে একটা ভীতি তৈরি করেছে জনগণের মনে। কিন্তু আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আত্মপ্রকাশের পর তা একেবারেই ভেঙে গেছে। কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের সাথেই ছিলাম।
‘দীর্ঘ পাঁচ বছর আমাদের যারা দেখেছেন তারা এখন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। আমি মনে করি, শিবির সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।’
শিবির কেন এতোদিন গোপনে রাজনীতি করেছে জানতে চাইলে এসএম ফরহাদ বলেন, “২০০৯ সাল পর্যন্ত ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছে। এরপরও যেখানে সম্ভব হয়েছে, সেখানে প্রকাশ্যে রাজনীতি করে গেছে।
“ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে ৫৬ দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়, বিভিন্ন শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে গুম করা হয়, ক্রসফায়ার দেয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ড দেয়া হয়; কেউ কিছু বলে না। এমন পরিস্থিতিতে ‘তুমি কেন পরিচয় দিচ্ছো না, এই প্রশ্ন যৌক্তিক নাকি ‘তোমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’ প্রশ্নটি যৌক্তিক?”
নয় দফার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে ফরহাদ বলেন, ‘এই আন্দোলনটা সব মানুষের ছিল। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজেদের দলের পরিচয় ভুলে গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী এখানে শামিল হয়েছেন। ছাত্রশিবিরও তার রিসোর্স নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। কোনটা কার পরিকল্পনা, কীভাবে তা বাস্তবায়ন হয়েছে- এসবের কৃতিত্ব নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্পিরিটের সাথে যায় না। এখানে সবাই দল-মত ভুলে একসাথে আন্দোলন করেছে।’
এসএম ফরহাদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ কায়েমে ছাত্রলীগ যে ধরনের ঘৃণ্য কাজ করেছে তার প্রতিটির বিচার হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীরা সবাই আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা মনে করি। কেউ যদি আইনি সহায়তা চান, আমরা ছাত্রশিবির থেকে তা দেবো।’
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটির কিছু প্রক্রিয়া আছে। আমি কখনও সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করিনি। কখনও সিভি জমা দেইনি। তবু কেন আমাকে পদ দিল, সে প্রশ্ন ছাত্রলীগকে করা উচিত। বিতর্ক সংসদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সাথে আমার ছবি দেখা গেছে। আমি কেবল আয়োজক হিসেবে ছিলাম।’
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিবিরের অবস্থানের বিষয়ে ফরহাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মনে রাজনীতি নিয়ে এখন যে চিন্তা-গঠন আছে, এটা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী বয়ানের আউটপুট। তারা দেখেছে, ছাত্ররাজনীতি মানে নেতাকে প্রটোকল দেয়া, হলে আসন বণ্টন করা, ভিন্ন মতকে নির্যাতন করা এবং কেউ কথা বলতে না পারা।
‘কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা দেখবে ছাত্ররাজনীতির নামে এসব কেউ করবে না বা করলে পানিশমেন্ট পাবে তখন তারা ছাত্ররাজনীতির এই সুন্দর রূপ দেখে এটির প্রতি আকৃষ্ট হবে বলে আমি মনে করি।’