বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবির বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ মাত্র ২.১২ শতাংশ

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ২৬ জুন, ২০২৪ ২২:৩৫

গবেষণায় বরাদ্দ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বাবিদ্যালয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। প্রত্যেকের জন্য গড়ে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ ১ লাখ টাকা। এই অর্থ দ্বারা বড় ধরনের মৌলিক গবেষণা আদৌ কি সম্ভব? বর্তমান যুগে টিকে থাকতে হলে নূতন নূতন উদ্ভাবন প্রয়োজন। প্রচুর অর্থ ব্যয় ব্যতীত এ ব্যাপারে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া দিবাস্বপ্ন মাত্র।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার নতুন বাজেট উপস্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এছাড়া, এসময় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বাজেট উত্থাপন করেন।

অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই বাজেটের মধ্যে বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ ব্যয় হবে ৬৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা যা মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ এবং গবেষণা মঞ্জুরি বাবদ ২০ কোটি ৫ লাখ টাকা যা মোট ব্যয়ের ২.১২ শতাংশ।

এই অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) থেকে পাওয়া যাবে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫.৩৭ শতাংশ।

এছাড়া, ২০২৩-২০২৪ সালের মূল বাজেট ছিল ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে ৫৯ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার বৃদ্ধি করে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এই সংশোধিত বাজেটে বিমক থেকে অনুদান এসেছে ৭৭৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং নিজস্ব আয় হিসেবে ৯০ কোটি টাকাসহ আয় ধরা হয়েছে ৮৯১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৮.৩৬ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বুধবার বাজেট উত্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা

বাজেট আলোচনায় কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট চাহিদা ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। বিমক বরাদ্দ করে মাত্র ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব আয় খুবই কম বিধায় বাজেট প্রণয়নে আমাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় বিমকের অনুদানের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ বিমক তার অনুদান যথাযথভাবে বৃদ্ধি করছে না, যা অপ্রত্যাশিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে এই যৎসামান্য বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির চাইতেও কম।’

কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় বিধায় নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতি বছর এভাবে তহবিলের ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে অথবা সরকারের নিকট থেকে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে।’

গবেষণায় বরাদ্দ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘গবেষণার জন্য ২০ কোটি টাকা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বাবিদ্যালয়ে ২ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। প্রত্যেকের জন্য গড়ে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ ১ লাখ টাকা। এই অর্থ দ্বারা বড় ধরনের মৌলিক গবেষণা আদৌ কি সম্ভব? বর্তমান যুগে টিকে থাকতে হলে নূতন নূতন উদ্ভাবন প্রয়োজন। প্রচুর অর্থ ব্যয় ব্যতীত এ ব্যাপারে সাফল্যমণ্ডিত হওয়া দিবাস্বপ্ন মাত্র।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং নিয়ে অনেক আলোচনা শুনতে পাই। এই র‌্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে প্রয়োজন গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বহুলাংশে বৃদ্ধি করলে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাব বলে আমার বিশ্বাস।’

অভিভাষণ বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে তার ভাবনাকে বাস্তবে রূপদানের কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে ক্রমান্বয়ে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের মূল চেতনা সঙ্কুচিত হতে থাকে। এর মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন না থাকা। এক্ষেত্রে সরকারের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকায় স্বাধীনভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায়ও আমরা আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন খাত থেকে যা আয় করে, সেই পরিমাণ অর্থ বাজেট প্রণয়নের সময় বাদ দিয়ে বিমক বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিয়ে থাকে। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে হলে নতুন নতুন উদ্ভাবনের দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে।’

সরকারের সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে গবেষণা কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন উপাচার্য।

এ বিভাগের আরো খবর