বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তদন্ত অন্ধকারে, আটকে আছে দুর্নীতিবাজদের সাজা

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:০৬

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আর সে সুবাদে অভিযুক্তরা স্বপদে রয়ে গেছেন বহালতবিয়তে।

দুর্নীতি প্রকাশ পেলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আর জমা পড়ে না। আর জমা পড়লেও তা আলোর মুখ দেখে না। সময় পরিক্রমায় সেই দুর্নীতি দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। আর স্বপদে বহাল থেকে যান চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন এভাবেই ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আর সে সুবাদে অভিযুক্তরা স্বপদে রয়ে গেছেন বহালতবিয়তে।

নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্ত ফাইলবন্দি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিটি তদন্ত শেষ করলেও সেই রিপোর্ট আর জমা হয়নি।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) ওয়ালিউল হাসানাত নামে একজন অধ্যাপকের নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ ওঠে। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগ তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ জুন ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেন।

ইউজিসি গঠিত ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ। এছাড়া কমিটির সদস্য সচিব ইউজিসির উপ-পরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর এবং সদস্য হচ্ছেন ইউজিসিরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।

তদন্তে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পায় কমিটি। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ইউজিসিতে সশরীরে হাজির হয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে এক বছর। তবে তদন্ত শেষ হলেও সেই রিপোর্ট আর জমা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘তদন্ত তো করেছিলাম। পরে এ বিষয়ে আর কোন মিটিং হয়নি। তাই অগ্রগতি কোন পর্যায়ে আছে বলতে পারব না।’

অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। বর্তমানে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান পদে কর্মরত। তিনি ২০১০ সালে ২৮ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মো. শাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ সালের অক্টোবরে তার মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান। ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি তিনি পূর্ণ উপাচার্যের দায়িত্ব পান। সেখান থেকে পরপর দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ২৯ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান তিনি।

স্বপদে বহাল কম যোগ্যতার শিক্ষক

সাবেক উপাচার্যের হাত দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া আইন ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু কাগজ নিউজবাংলার হাতে রয়েছে। ওই কাগজ বিশ্লেষণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ালিউল হাসনাত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য সব যোগ্যতা ও শর্তের সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে কমপক্ষে চার বছরের বাস্তব শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।

কিন্তু ওয়ালিউল হাসানাতকে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়ার সময় তা মানা হয়নি। তার নিজ হাতে লেখা অধ্যাপক পদের আবেদনপত্রে দেখা যায়, সহযোগী অধ্যাপক পদে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তিন বছর ছয় মাস সাত দিন। তিনি ১০ মাস ১৪ দিন লিয়েনে (শর্তসাপেক্ষে ছুটি) ছিলেন। ওই কার্যকালকে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখিয়ে তাকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্র স্ক্রুটিনিও (যাচাই-বাছাই) করা হয়নি।

ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ প্রক্রিয়াও হয়েছে খুব দ্রুততার সঙ্গে। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই ডিসিপ্লিনের একটিমাত্র অধ্যাপক পদের বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের ১৮৯তম সভায় সেটি উপস্থাপন করে অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়। পরদিন ১ জানুয়ারি তিনি ডিসিপ্লিনে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের পর সেটি রেজুলেশন করতে হয়। তারপর শিক্ষককে যোগদান করার জন্য চিঠি পাঠাতে হয়। এক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। রেজুলেশন করার আগেই ওয়ালিউল হাসানাত রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিয়েনে থাকা সময়কে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে তা দেখানো হয়েছিল। অন্যদিকে রেজুলেশন না করেই তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি যেহেতু তদন্ত করছে, আমরা তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

তিন ঘণ্টার তদন্ত শেষ হয় না এক বছরেও

কলেজছাত্রীকে শ্লীলতাহানির মামলায় কারাগারে থাকলেও সেই সময়ের বেতন-ভাতা নিয়েছিলেন খুলনা বিশ্বদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুকুজ্জামান দাড়িয়া। অথচ খুলনা বিশ্বিদ্যালয়ের চাকরির বিধিমালায় রয়েছে, কোনো কর্মকর্তা কারাগারে থাকলে সেই সময়ের জন্য তাকে বরখাস্ত করতে হবে।

আদালতের নথিপত্র, মামলার এজাহার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর মো. ফারুকুজ্জামান দাড়িয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়। মামলায় অভিযোগ ছিল, এক কলেজ ছাত্রীকে তিনি প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিতেন। ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে নিজ বাড়ির ছাদে নিয়ে তিনি ওই কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীর মা ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পরদিন ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। আর জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অসুস্থ থাকার কথা বলে সনদ দাখিল করে কারাগারে থাকার সময়ের বেতন-ভাতা তুলে নেন।

ইউজিসি থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর এ বিষয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে প্রকৌশলী মো. ফারুকুজ্জামান দাড়িয়াকে বরখাস্ত করে রাখা হয়। তবে তদন্ত কমিটি আরও সময় চাওয়ায় দাড়িয়ার বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করে বিশ্বদ্যালয় প্রশাসন। এই ঘটনার পর প্রায় এক বছর হয়ে এলেও তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা হয়নি।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘সবকিছুই নিয়ম মোতাবেক হচ্ছে। প্রতিবেদনটি পেলে দাড়িয়ার কাছে আবারও ব্যাখা চাওয়া হবে। পরে সিন্ডিকেটে তোলা হবে। কিন্তু তদন্ত কমিটি কী কাএণ প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না তা বলতে পারব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার সব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। মাত্র তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করলে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করা সম্ভব। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণে তদন্ত কমিটির সদস্যরা দাড়িয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছেন। আর সে কারণে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না তদন্ত কমিটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিভাগের আরো খবর