জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলের কক্ষে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বুধবার চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চলছে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন।
ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যরা মানববন্ধন করেন। দুপুর ১২টায় একই স্থানে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক।
বেলা ২টায় মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত পূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চে’র ব্যানারে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সমাবেশ করেন ।
এরপর বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে পলায়নের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ শেষে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও পলায়নে সহযোগিতাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে পলায়নের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা, সব আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া এবং যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করা, যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তিসহ সব অপরাধের বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
এদিকে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটদের মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে হাজির হয়েছি গণরুম ও ধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাতে। ধর্ষণে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার বা বহিষ্কার নয়, অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝুলানো হোক।
‘অছাত্রদের অবিলম্বে হল থেকে বিতাড়িত করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি হলে ১৬ হাজার আসন রয়েছে। ১৬ হাজার আসন থাকা সত্ত্বেও কেন শিক্ষার্থীরা আসন পায় না? কেন তাদেরকে গণরুমে থাকতে হয়?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ডাটাবেস নেই। ফলে কোন কক্ষে কে থাকে, কোন কক্ষ কখন খালি হয় এসব হিসাব প্রাধ্যক্ষদের কাছে থাকে না।
‘প্রাধ্যক্ষদের বলতে চাই- আপনারা আপনাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। ২৩ জন প্রাধ্যক্ষ যদি একসঙ্গে প্রতিটি হলের কক্ষে যান তাহলে কিভাবে অছাত্ররা হলে থাকে?
‘উপচার্যকে বলতে চাই, আপনি ৪ তারিখে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে পাঁচদিনের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করবেন। পাঁচ দিন মানে পাঁচদিন। এর মধ্যেই আমরা অছাত্রমুক্ত হল চাই।’
শিক্ষকদের মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘আমরা ধর্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের বিচার যেমন চাই, তেমনই এই বিশ্বিবদ্যালয়ে যেন এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর না ঘটে তার একটি প্রস্তুতি দেখতে চাই।
‘রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষক মোস্তাফিজুরের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। পাশাপাশি মোস্তাফিজুরকে পালাতে যারা সাহায্য করেছে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল চাই। ধর্ষককে পাকিয়ে যেতে হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর সহায়তা করে থাকলে তাদেরও বিচার আমরা চাই।’
বিকেল ৩টায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন-পরবর্তী সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীরা গণরুমে থাকে, তাদেরকে গেস্টরুম করানো হয়। সিট দখল করে আছে অছাত্ররা, কোনো পরিবর্তন নেই।
আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই- অছাত্রদের হল থেকে বের করে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট নিশ্চিত করুন। একইসঙ্গে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করুন। খতিয়ে দেখুন তাদের কোনো সংযোগ আছে কি না।’
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যদের পলায়নে সহায়তার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।