জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ডেকে নিয়ে স্বামীকে হলের কক্ষে আটকে রেখে পাশের জঙ্গলে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে অব্যাহত রয়েছে আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী গণ পোস্টারিং শুরু হয়।
বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা ও মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে যায়। সেখানে কিছু সময় বিক্ষোভ করেন তারা। পরে নতুন কলা ভবনের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
গণ পোস্টারিং চলাকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটছেই। আমরা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ এর আগের নিপীড়নের অমিমাংসিত ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত চাই।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মৃধা বলেন, ‘যারা ধর্ষকদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এ ধরনের ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে যে, যেসব শাস্তি ধর্ষকদের দেওয়া হয়েছে তার যেন যথাযথ বাস্তবায়ন হয়। তা নাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
আরেক শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান সজীব বলেন, ‘বহিরাগতের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটি যেন বাস্তবে প্রতিফলন দেখা যায়। হল থেকে দ্রুততম সময়ে অছাত্রদের বের করতে হবে।’
এদিকে, দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়নে “নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ” নামে প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে।
শনিবার রাতের এ ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে রোববার বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে প্রশাসন। সেখানে তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও তাদের সনদ স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি এই তিনজনসহ আরও তিন শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত ও তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্তও নেয় প্রশাসন।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।