ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মিঠুন বৈরাগী।
আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে তাদের উপাচার্য বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।
গত ২ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। নবীন শিক্ষার্থীদের আগমনের একদিন আগে থেকেই র্যাগিং বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ, এমনকি ছাত্রত্বও বাতিল হতে পারে বলে জানানো হয়।
তবে ক্লাস শুরুর কয়েকদিন পরই সদ্য ভর্তি হওয়া এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিং করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের বিষয়টি গত ৫ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীর বাবা শওকত হোসেন নিজেই রেজিস্ট্রার বরাবর মেইলে জানান।
পরে ৯ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগীয় সভাপতির কাছে সশরীরে লিখিত অভিযোগ দেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম তাহমিন ওসমান। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ওই বিভাগের মিজানুর ইমন, শুভ, আকিব, সাকিব, পুলক।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ছয় পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শুভ, মিজানুর ইমন, আকিব, পুলক ও সাকিবসহ মোট পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তাহমিন ওসমান বলেন, আমি চাই না আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা আর কোনো শিক্ষার্থীর সাথে ঘটুক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিন্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নেবো। তবে আমার মধ্যে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা শওকত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাদের সিন্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শুভ ফোনে বলেন, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। এটার জন্য একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অনেক প্রভাব পড়তে পারে। আমি হাইওয়েতে রয়েছি। আমার আঙ্কেল অসুস্থ, ঢাকা গিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে ফিরছি। ১০ মিনিট পরে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কমিটির বিষয়টি জেনেছি তবে চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিল্যান্স কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সনীতি অনুসরণ করছি। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্ট, ইবি থানা ও একজন সহযোগী প্রক্টরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।