বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আমাদের সন্তানরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত নয়’

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১ আগস্ট, ২০২৩ ১৬:৪৩

অভিভাবকগণ বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

তারা বলেছেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র। কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

মামলা দায়ের প্রসঙ্গে অভিভাবকরা প্রশ্ন তোলেন, ‘নাশকতার পরিকল্পনা করতে টাঙ্গুয়ার হাওর কেন যেতে হবে?’

তাদের দাবি, আটককৃত শিক্ষার্থীরা তাদের আইনজীবীদের জানিয়েছেন, মামলা দেয়ার জন্য পুলিশ নিজেরাই নানাকিছু সংগ্রহ করে তাদের কাছে পাওয়া গেছে বলে ‘জব্দ’ হিসেবে দেখিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রেপ্তার বুয়েট ছাত্র আলী আয়াম্মর মুয়াজের বড় ভাই আলি আহসান জুনায়েদ। এসময় সেখানে আবরার মুহতাদিরের মা ওয়াহিদা নাসরিন, হাইসান বিন মাহবুবের মা ফাতেমা বেগম, আফিফ আনওয়ারের বাবা আনোয়ারুল হক, সাকিব শাহরিয়ারের বাবা জামাল উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আলি আহসান জুনায়েদ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আর কোনো অভিভাবক কথা বলেননি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা ছোটবেলা থেকে মেধাবী ছাত্র। ভালো সন্তান হিসেবে আমরা তাদের ব্যাপারে গর্ব করি। ছোটবেলা থেকেই তাদের পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক ছিল; রাজনীতিসহ এ জাতীয় কোনো কাজের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না কখনোই। উপরন্তু, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা সর্বদাই তাদের এ ব্যাপারে সাবধান করে গিয়েছি এবং তারাও রাজনীতিমুক্ত হিসেবেই ছিল। অতএব, তারা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত- এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমাদের জ্ঞাতসারে গত ২৯ জুলাই শনিবার আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়াতে যায়। যাওয়ার পরে সুনামগঞ্জ গিয়ে আরও বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয় এবং তারা সবাই একত্রে ঘোরার কথা জানায়। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, হাওড়ে এলাকায় হয়ত নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদেরকে ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এরপর প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নম্বর জানাতে বলে।

‘পুলিশ তাদের হাওরে নৌকা ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর আইডি কার্ডের নম্বর নেয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে।’

অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদেরকে ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে দেয়া হয়েছে। এর বেশি আর তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি, ফোন নিয়ে নেয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এরপর থেকে আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর জানার জন্য ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু উনারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদের আটক করা হয়েছে।

‘অনেক উদ্বিগ্নতার পর গতকাল বিকেলে সংবাদমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরণাই আশ্চর্যান্বিত হই।

‘আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দূরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় ওসি ও এসপিকে ফোন দেয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে উপাচার্য স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দেখার পর গতকাল সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বিচ্ছিন্নভাবে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসি উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করতে। তবে ভিসি স্যারের পরিবর্তে মাননীয় ছাত্রকল্যাণ পরিষদ পরিচালকের সঙ্গে আমাদের দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে, সে বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন, সেটা আমরা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক মহোদয়কে অবহিত করি। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানাই। তারা তাদের প্রসিডিউর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে, এমন অভিযোগও হাস্যকর। জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে, এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়।’

অভিভাবকবৃন্দের দাবি, ‘কোর্টে তোলার সময়ে আইনজীবীদের আমাদের সন্তানেরা জানিয়েছে, এই মামলা সাজাতে পুলিশের যেসব কাগজপত্র প্রত্যাশিত, সেসবের কিছুই তাদের কাছ থেকে না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত সেসব অনাকাঙ্ক্ষিত মালামাল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে তাদের মামলা সাজানোর জন্য।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পরিবার হিসেবে তারা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক সময় পার করছেন এবং সন্তানদের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন দাবি করে দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বিচারবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তারা দাবি জানান।

এ বিভাগের আরো খবর