বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রুয়েটের ১৩৭ শিক্ষক-কর্মচারী দু’বছর পর জানলেন তাদের নিয়োগ অবৈধ

  • প্রতিবেদক, রাজশাহী   
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১৬:০৭

রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকরি বাতিলের এই চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ১৩৭জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে এসব নিয়োগ বাতিল করতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত ৪ এপ্রিল রুয়েট উপাচার্য বরাবরে পাঠানো হয়। এই খবর জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট নিয়োগপ্রাপ্তরা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের এই আদেশের প্রতিবাদে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তারা রুয়েট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছেন। তারা বলছেন, ‘নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল বা অনিয়ম হয়ে থাকলে তার জন্য তো আমরা দায়ী নই।

দুই বছর চাকরি করার পর বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়াদের একজন সৌমিক সরকার রাহুল। তিনি রুয়েটে চাকরি করছেন সহকারী নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ২০২১ সালের ১ জুন এই পদে যোগদান করেন তিনি। এরপর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।

শুধু সৌমিকই নন, তার মতো রুয়েটের ১৩৭ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীই এক অনিশ্চিত জীবনের মুখে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের দায়ে তাদের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এই নির্দেশনা বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌমিক সরকার রাহুল বলেন, ‘আমি যোগ্য প্রার্থী হিসেবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছি। নিয়োগ বোর্ডে কে থাকবে আর কে থাকবে না তা চাকরিপ্রার্থীর জানার বিষয় নয়। এখন হঠাৎ করে চাকরি নেই বললে আমরা কোথায় যাবো? এখানে আমাদের দোষ কোথায়?’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাবেক উপাচার্যের মেয়াদে দেয়া নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত ৪ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে চারটি নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রথমটি হলো- যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ ও বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩ এর ১০ (৩) এবং ১১ (৮) ধারার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় আইনের মৌখিক প্রিন্সিপাল অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গৃহীত ও সম্পাদিত কার্যক্রম শুরু থেকে বাতিল হিসেবে গণ্য হবে মর্মে উল্লেখ আছে যেহেতু এ সংক্রান্ত সব নিয়োগ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো।

এদিকে, নিয়োগ বাতিলের এই চিঠি দেখে ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন।

নিয়োগপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার আ. ফ. ম. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত সচিব সিন্ডিকেট সদস্য আমাদের নিয়োগ অনুমোদন ও বৈধতা দিয়েছেন। কিন্তু এতদিন পর ওই মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ বাতিলের নির্দেশনা কিভাবে সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

কেয়ারটেকার মেহেদী হাসান পান্না বলেন, ‘আমার পরিবার আমার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। এতদিন পর যদি চাকরি না থাকে তাহলে আমার ও আমার পরিবারের কী হবে? আমার চাকরিতে আবেদন করার বয়সও শেষ।’

সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. নাঈম রহমান নিবিড় বলেন, ‘আমি ২০২১ সালের ১ জুন থেকে রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত। ইতোপূর্বে আমি বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় কার্ড পাওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিনি। এখন নিয়োগ বোর্ডে কোন অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির দায়ভার তো আমার না। আমরা দোষী না হয়েও শাস্তি পাবো এটা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে যা যা করার দরকার করবো।’

এদিকে রাজশাহী প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। একটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাকরি বাতিলের এই চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর