করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকলেও এবার জমকালো আয়োজনে বই উৎসব উদযাপিত হবে। নতুন বছরের প্রথমদিন রোববার প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী এ উৎসবের মধ্য দিয়ে হাতে পাবে নতুন বই। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের বই বিতরণ করা হবে। এছাড়া স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেবেন শিক্ষকরা।
গত মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে ১ জানুয়ারি ‘পাঠপুস্তক উৎসব দিবস-২০২৩’ উদযাপন করা হবে।
শনিবার বছরের শেষ দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে দুই বছর পর উৎসবের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি বই বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও ২০২৩ সালের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সব বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীদের হাতে বই যেমন দেরিতে পৌঁছাবে, তেমনি এবারের পাঠ্যপুস্তক পুরো শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত টিকবে কি-না তা নিয়েও আছে সংশয়।
কারণ কাগজ সংকটে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে ছাপানো হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক।
দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে নতুন বই দিয়ে আসছে সরকার। তবে প্রতিবারই অভিযোগ ওঠে নিম্নমানের বই সরবরাহের। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুদ্রণ ও এনসিটিবি উভয়পক্ষই জানিয়েছে, কাগজ সংকটের কারণে নিউজপ্রিন্টে ছাপানো হচ্ছে বই। আর ১ জানুয়ারি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৮০ ভাগ বই পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। দেশের সব উপজেলায় বই পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে বাকি বই সবাই পেয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকের জন্য বই উৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিকের বই উৎসব গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
ফরহাদুল ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের মাঠে বই উৎসবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবেন কাপাসিয়ার আয়োজনে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৩ কপি পাঠ্যবই ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৫ কপি পাঠ্যবই ছাপানোর কথা রয়েছে।