ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের পলিথিনে করে পোশাক দেয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। টাইয়ের মধ্যে যে বানান ভুল, সেটি নিয়ে বিদেশিদের কাছে সম্মানহানির শঙ্কাতে আছেন তিনি।
টাই সরবরাহকারীদের ভুল শুদ্ধ করে নতুন করে টাই বানিয়ে দিতে বলা হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি জানান, নতুন টাই এলে সেগুলো বিদেশিদের দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পলিথিন ব্যবহার করা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে আমাদের আরও যত্নশীল থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পলিথিন দেয়ার বিষয়টা আমার রাতে নজরে এসেছে। খবর নিয়ে জেনেছি, ক্যাম্পাসে সাতটি ভেন্যু থেকে কস্টিউম দেয়া হয়েছে। সেই সাতটি থেকে দুটো কেন্দ্র থেকে পলিব্যাগে কস্টিউম বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকিগুলো থেকে টিস্যু ব্যাগে করে কস্টিউম দেয়া হয়েছে।
‘এটি অসতর্কতাবশত করা হয়েছে। এটির জন্য আমরা দুঃখিত। সামনে থেকে এটিসহ আরও একটি বিষয়ে আমাদের সতর্ক হব এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপান্তর করতে যা যা করা প্রয়োজন সব আমরা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণপত্রে কার্ডের ওপর যে পলিথিনের প্রলেপ থাকে সামনে থেকে সেটিও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
টাইয়ে ভুল প্রসঙ্গ
সমাবর্তন উপলক্ষে দেয়া টাইয়ের মধ্যে বানান ভুলের বিষয়ে এক প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, ‘গতকালকে এটি আমাদের নজরে এসেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এগুলো যখন আমরা বিদেশিদের দেব, তখন এগুলো তো আমাদের জন্য সম্মানজনক হবে না।’
সরবরাহকারীরা ভুলটা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছি, আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং বাড়তি আরও কিছু টাই বানিয়ে দিতে বলা হয়েছে, যেগুলো আমরা বিদেশিদের দিতে পারি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই ভুলের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স জানিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ হিসেবে ভুল থাকবে। কিন্তু সেই ভুলকে কীভাবে মিনিমাইজ করা যায় সেটির বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। এটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি ইতোমধ্যে জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
সমাবর্তনের দিনের নিয়মাবলি
আগামী শনিবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের মূল ভেন্যু হবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভার্চ্যুয়ালি সমাবর্তনে অংশ নেবেন।
সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ জাঁ তোরেল সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি দেয়া হবে। তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রির সংখ্যা হবে ৫৩টি।
এবারের সমাবর্তনে মোট ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্য ২২ হাজার ২৮৭ গ্র্যাজুয়েট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ভেন্যুতে এবং ৭ হাজার ৭৯৬ জন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের ভেন্যুতে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে ১৩১ জন শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে।
সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং কনস্টিট্যুয়েন্ট কলেজের অধ্যক্ষ/ইনস্টিটিউটের পরিচালক বেলা ১১টায় কার্জন হলে উপস্থিত থাকবেন। সেখান থেকে বের হবে মিছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা খেলার মাঠের সুইমিং পুলসংলগ্ন গেট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করবেন। তাদের জন্য সকাল সাড়ে ৯টায় গেট খোলা হবে এবং তারা ১১টার মধ্যে তারা সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করবেন।
আমন্ত্রিত অতিথিরা জিমনেসিয়ামসংলগ্ন গেট দিয়ে সমাবর্তনস্থলে যাবেন। তাদের জন্য সকাল ১০টায় গেট খোলা হবে। তারা বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আসন গ্রহণ করবেন।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্র এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইডি বা পাসপোর্ট সঙ্গে আনতে হবে।
মোবাইল ফোন, হাতব্যাগ, ব্রিফকেস, ক্যামেরা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ছাতা ও পানির বোতল নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরে আসতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সমাবর্তনের দিন ভিআইপি এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়ি কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ভবন (কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সায়েন্স এনেক্স ভবন) মাঠে পার্কিং ব্যবস্থা থাকবে।
অন্যান্য গাড়ি এসএম হল, জহুরুল হক হল, মুহসীন হলের মাঠ এবং ফুলার রোডে পার্কিং করতে হবে।
সমাবর্তনের দিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিএসসি ক্রসিং থেকে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট থেকে দোয়েল চত্বর এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে পুলিশকে অনুরোধ করেছে বিশ্ববিদালয় প্রশাসন।
সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে শাহবাগ থেকে টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে।