বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জয়পুরহাটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন রকম উপস্থিতি

  • রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট   
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:০৮

জয়পুরহাটে শহরের ‘মডেল’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর গাদাগাদি আর গ্রামাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক প্রকার শিক্ষার্থী শূন্যতা। সঙ্গে আছে শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত দুর্বলতাও। শহরের বিদ্যালয়ের তুলুনায় গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর লেখাপড়ার মান সন্তোষজনক নয়। সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলামের কথাতেও এমন ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়া জেলায় ১২৭টি প্রধান শিক্ষক ও ১৯৬ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭১টি। মঞ্জুরিকৃত ৩৭১ জন প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৪৪ জন। ২০৭৬ জন সহকারী শিকক্ষকের বিপরীতে ১৮৮০ জন। ১২৭টি প্রধান শিক্ষক ও ১৯৬ জন সহকারী শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে।

অপরদিকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোন কর্মকর্তার পদ শূন্য নেই। একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুই সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, একজন তদারকি (মনিটরিং) কর্মকর্তা ও পাঁচটি উপজেলায় ৫ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ১৫ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। শুধু কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

জয়পুরহাট জেলা সদরের একটি ও তিনটি উপজেলা সদরের তিনটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রামাঞ্চলের তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই তুলুনায় গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই। আবার গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে নজরদারিও কম হয়।

মডেল স্কুলে শিক্ষার্থীর গাদাগাদিঃ জয়পুরহাট শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৫৫১ জন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে তিনটি শাখা রয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের ১৭টি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি শ্রেণি কক্ষ একটি অফিস কক্ষ। একটি কক্ষে গাদাগাদি করে শতাধিক শিক্ষার্থী বসে। পঞ্চম শ্রেণিতেই ৩৫১ জন শিক্ষার্থী। ফলে ক্লাস নিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষকদের।

আক্কেলপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৩২ জন শিক্ষার্থী। ১০ জন শিক্ষক আছেন। নয়টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ক্ষেতলাল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১৪ জন শিক্ষার্থী। নয় জন শিক্ষক রয়েছেন। এরমধ্যে একজন পুরুষ আট জন নারী। ১০২ জোড়া ব্রেঞ্চ আছে। কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪৩ জন শিক্ষার্থী। নয় জন শিক্ষক আছেন। ব্রেঞ্চের স্বল্পতা নেই।

জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির দুই জন শিক্ষার্থী বলেন, তিনজনের ব্রেঞ্চে গদাগাদি করি কখনো চার জন আবার কখন পাঁচ জন বসে। ক্লাসে পাঠদানের মনোযোগ কম হয়। একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে শহরের স্কুলে পড়ে। ভর্তি পাওয়া গেলেও গাদাগাদির কারণে ভালোভাবে শিখতে পারছে না। তাই আলাদা করে প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে।

জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার সন্তোষজনক। তবে একটি ওয়াশব্লক। এ কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীর তুলুনায় ১৫০ জোড়া ব্রেঞ্চ ঘাটতি আছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রচুর শিক্ষার্থী রয়েছে। ওয়াশব্লক ও ব্রেঞ্চের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের স্কুলে এক প্রকার শূন্যতা:

অন্যদিকে গ্রামে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। আক্কেলপুর উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী মাত্র ৮৮ জন। শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও মাঝেমধ্যে অনেক কম হয়। শ্রেণিকক্ষের ব্রেঞ্চগুলো বেশিভাগই ফাঁকা থাকে।

কালাই উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে কাথাইল গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ১২৯ জন শিক্ষার্থী। এখানে ছয় জন শিক্ষক আছেন। এরমধ্যে একজন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।

ক্ষেতলাল উপজেলা সদর থেকে প্রায় প্রায় ১১ কিলোমিটার দুরত্বে বড়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে মোট ৭৫ জন শিক্ষার্থী। একটি শ্রেণিক্ষে ৪ জন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়। প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, গ্রামে মেলা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন।

শিক্ষক সংকট ও নেতৃত্বের ঘাটতি:

জেলার অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক নেই। যেসব স্কুলে আছেন, তারা শিক্ষা অফিসের নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন।

ডিজিটাল শিক্ষার অভাবঃ

সরকারি উদ্যোগ থাকলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যত অনুপস্থিত। শহর ও গ্রাম—কোনো বিদ্যালয়েই প্রোজেক্টর বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করা হয় না।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, যে বিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার মান ভালো হয়। অভিভাবকরা সেখানেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করান। বিদ্যালয়গুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর