কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ওহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেছেন, অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
শিক্ষার্থীদের দেয়া সালাম গ্রহণ না করে উল্টো কটূক্তি করেছেন- এমন অভিযোগ তুলে গত ২৪ আগস্ট ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টিতে বিক্ষোভ হয়। কয়েক ঘণ্টা চলা বিক্ষোভে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা অংশ নেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ওই শিক্ষককে।
‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগ ওঠার পর থেকে আতঙ্কে গৃহবন্দি দিন কাটছে ওই শিক্ষকের। শুরু থেকেই তিনি অভিযোগ অস্বীকার করছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনও বলছে, কোনো গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অস্থিরতা তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: সালাম না নেয়ায় ‘ধর্ম অবমাননা’, আতঙ্কে স্কুলশিক্ষক
ঘটনার তিন দিন পর অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওহিদুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য মো. কামরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধি মো. বশিরুল ইসলাম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩১ আগস্ট থেকে কাজ করছে তদন্ত কমিটি। ৭/৮ সেপ্টেম্বরের দিকে তারা প্রতিবেদন জমা দেবে, সেটি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদন্তের অগ্রগতি জানতে রোববার নিউজবাংলা কথা বলেছে কমিটির সদস্য ওহিদুল ইসলামের সঙ্গে। স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
তাহলে এত বড় ঘটনার কীভাবে ঘটল জানতে চাইলে ওহিদুল বলেন, ‘ছেলেরা বলল যে, পাঁচ-ছয় মাস আগে একদিন ম্যাডাম ক্লাসের মধ্যে বইলছিল। আমরা বললাম, ছয় মাস আগের কাহিনি এখন আনলে কেন? ওই ঘটনার আগের দিন এক ছাত্রকে ওই ম্যাডাম মারিছিল বেয়াদবি কইরছিল বলে। মারার কারণে রাগের চাপে ওরা ওইগুলা বলছে। বাইরের মানুষ মনে করছে আজকেই বোধয় বলছে। কিন্তু কেউ শুনল না, ঘটনা আদৌ সত্য কি না। এইটা হইল কাহিনি।’
স্কুলের পরিবেশও শান্ত হয়ে এসেছে জানিয়ে ওহিদুল আরও বলেন, ‘আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা একটা রিপোর্ট দিয়ে দিবনি, দু-চার দিনের মইধ্যে দিয়ে দিবনি।’
তদন্তের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ ও ঘটনা অনুসন্ধান করে ওহিদুল নিশ্চিত হয়েছেন ‘মিথ্যার ওপর’ দাঁড়িয়ে আছে পুরো ঘটনাটি।
ওহিদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন যে ঘটনা ঘটে, সেই ঘটনা একটা মিথ্যার ওপর এই ঘটনা ঘটে গেছে।’
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে ওহিদুল জানান, ওই নারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শাসন করেন।
তিনি বলেন, ‘ছেলেপেলের ম্যাডামের প্রতি অনাস্থার কারণ স্কুলে শাসনমূলক কাজটাজ করে। এখন ওইখানে ছেলেদের তো শাসন করা চলে না। এই কারণে ছেলেপেলেদের দেখলাম ম্যাডামের ওপর অনাস্থা। ছাত্রদের আমরা বুঝিয়েছি, তিনি তো শিক্ষক। ছাত্রদের নিয়ে আমরা বসছিলাম। ওরাও ক্ষোভের কথা বলল। একপর্যায়ে সবাই ভালো থাক- এই মর্মে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আর কোনো ঝামেলা নেই। ছাত্রদের কোনো অভিযোগ নেই।’
বিদ্যালয় চালু হলেও নতুন করে যাতে কোনো উত্তেজনা দেখা না দেয়, তাই ওই নারী শিক্ষককে কয়েক দিন ক্লাসে না আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওহিদুল বলেন, ‘১০-২০ দিন থাক। তারপর সভাপতি সাহেব এসে স্কুলের ক্লাসে ক্লাসে নিয়ে গিয়ে সব ঠিকঠাক করে দেবেন।’