বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগ নেত্রীদের ‘ক্রেডিট নেয়ার’ স্মারকলিপি

  •    
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:১১

ছাত্রলীগের এই স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়ে আবদুল কাদের নামে এক শিক্ষার্থী ফসবুকে লেখেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ছাত্রলীগ নেত্রীদের আরেকজনের বিল সেচা কৈ মাছ খাওয়ার জন্য দাঁত কেলানোর দরকার ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন দাবিটা তুলছে, তখন তাদের সঙ্গে সংহতি জানানো উচিত ছিল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না থাকলেও অদ্ভুত কিছু নিয়ম মানা হয় ছাত্রীদের হলগুলোতে। এসব নিয়মের কারণে এক হলের ছাত্রীরা আরেক হলে ঢুকতে পারেন না। এমনকি যেসব ছাত্রী হলে থাকেন না তাদেরও অ্যাটাচড হলে ঢুকতে দেয়া হয় না।

এখানেই শেষ নয়। রাত ২টার পর হলের অভ্যন্তরীণ বিল্ডিংগুলোর গেটও বন্ধ করে দেয়া হয়। এই সময়ের পর এক বিল্ডিংয়ের শিক্ষার্থীরা আরেক বিল্ডিংয়ে যেতে পারেন না। ফলে বিল্ডিংয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীদের আর নামার সুযোগ থাকে না।

এসব নিয়ম বাতিলসহ আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন হলগুলোর ছাত্রীরা। তারা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন পদক্ষেপে টনক নড়েছে ছাত্রলীগের। শিক্ষার্থীদের এই সমাবেশের ঘোষণা আসার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই শনিবার এসব দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পাঁচ ছাত্রী হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা।

শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, ছাত্রলীগের এসব নেত্রী এতদিন কোথায় ছিলেন? শিক্ষার্থীরা সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর ক্রেডিট নিতে তড়িঘড়ি করে একই দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রোববার অনুষ্ঠেয় সমাবেশে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরার কথা রয়েছে। সেগুলো হলো অনাবাসিক ও এক হলের ছাত্রীদের অন্য হলে ঢোকার ব্যবস্থা করা, খাবারের মান বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপন, হলের কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য কমানো এবং ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, হলে ফার্মেসি স্থাপন এবং কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং অগ্রিম অ্যাপ্লিকেশন ছাড়া নাম এন্ট্রির মাধ্যমে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গেট দিয়ে হলে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা।

ছাত্রলীগ নেত্রীদের দেয়া স্মারকলিপিতে থাকা আট দাবির ছয়টিরই শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সঙ্গে মিল আছে। বাকি দুই দাবি হলো- দূরের হলগুলোতে যাতায়াতের জন্য বাসের ট্রিপ ও সময়সীমা বৃদ্ধি করা এবং ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য সঠিক রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা।

ছাত্রলীগের এই স্মারকলিপি দেয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবদুল কাদের নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘তাড়াহুড়ো করে ছাত্রলীগ নেত্রীদের আরেকজনের বিল সেচা কৈ মাছ খাওয়ার জন্য দাঁত কেলানোর দরকার ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন এই দাবিটা তুলছে তখন তাদের সঙ্গে সংহতি জানানো উচিত ছিল। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। সেটা না করে তড়িঘড়ি করে তাদের দাবিগুলা কপি পেস্ট করে ভিসির কাছে গিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতেছে। বাহ!’

জান্নাতুল সাদিয়া স্বর্ণালী নামে এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘একেই বলে কেউ মরে বিল সেচে কেউ খায় কৈ। দাবি তুলল সাধারণ শিক্ষার্থীরা আর সেটা কপি পেস্ট করে দ্রুততার সঙ্গে স্মারকলিপি দিয়ে দিল। বাহ!’

আবদুল্লাহ হীল বারি নামে আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘গতকালকেই দেখলাম ঢাবির নারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কর্মসূচি ডেকেছে রোববার। কিন্তু হুট করে আজ দেখি বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেত্রীরা স্মারকলিপিসহ ভিসি স্যারের কাছে চলে গেলো...! তারা এভাবে তাড়াহুড়ো করে স্মারকলিপি দিয়ে ঠিক কী বুঝাইতে চাইলো বুঝলাম না।

‘নাকি এমনটাই ভেবে নিচ্ছেন যে- হায় হায় এই যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে অন্যরা কথা বলতেছে, এই বুঝি সব নিয়ন্ত্রণ বেহাত হয়ে গেল!’

ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দীন সিফাত লেখেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে মেয়েদের হলগুলোর শিক্ষার্থীরা মিলে রোববার একটা প্রোগ্রাম আয়োজনের ব্যানার নিউজফিডে ভাসছে‍। আজকে দেখি অফ ডেতে তাড়াহুড়ো করে ছাত্রলীগ নেত্রীরা স্মারকলিপি দিয়ে আসছে!

‘যাকগে, দাবিগুলো তো পুরাই কপি-পেস্ট মনে হচ্ছে‍। এতো তাড়াহুড়ো না করে আগামীকাল শিক্ষার্থীদের পাশেই থাকতে পারতেন‍।’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রোববারের সমাবেশের অন্যতম আয়োজক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা অবশ্য ছাত্রলীগের স্মারকলিপি দেয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল নারী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রোগ্রামটা করব। আর আজ ছাত্রলীগ তাদের ব্যানারে স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা তাদের মতো করছে। যত বেশি প্রোগ্রাম হবে তত বেশি ভালো। প্রশাসন সচেতন হবে।’

ছাত্রলীগ ক্রেডিট নেয়ার জন্য এই স্মারকলিপি দিয়েছে- শিক্ষার্থীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা যদি ক্রেডিট নেয়ার জন্য কোনো প্রোগ্রাম করে থাকে তাহলে করুক। আমাদের ক্রেডিটের দরকার নেই। মূল বিষয় হলো আমাদের ভোগান্তি দূর হওয়া।’

এ বিষয়ে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট নেয়ার কিছু না। অন্য কেউ যদি এই বিষয়ে কথা বলে আমরা তাদের স্বাগত জানাই এবং তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। আমাদের সবারই চাওয়া এসব দাবি পূরণ হোক।’

দাবির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান কী বলেছেন জানতে চাইলে আতিকা বলেন, ‘স্যার বলেছেন যে এসব দাবির বিষয়ে আগামীকাল মেয়েদের হল প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটরদের নিয়ে মিটিং করবেন। হল প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

উপাচার্যের বক্তব্যের সাথে আতিকার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থীদের এসব দাবির বিষয়ে অধ্যাপক আখাতারুজ্জামান বলেন, আজকে তারা আমার কাছে এসেছে। ছাত্রীদের হলের বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখিত আকারে জানিয়েছে। আমি ছাত্রী হলগুলোর প্রাধ্যক্ষদের আগামীকাল দুপুর বারোটায় চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যোক্তিক উপায়ে কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায় সেসব নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো।

এ বিভাগের আরো খবর