‘এ’ ইউনিটের মাধ্যমে শুরু হয়েছে দেশের ২২টি পাবলিক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। শনিবার বিজ্ঞান ইউনিটে রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, বাংলা ও ইংরেজি মিলে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সিলেবাস নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, শর্ট সিলেবাস অনুসারে পরীক্ষার প্রশ্ন করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। বরং প্রশ্ন এসেছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস থেকে।
রংপুর থেকে আসা পরীক্ষার্থী অনন্যা বলেন, ‘আমরা এক বছরের শর্ট সিলেবাসে লেখাপড়া করেছি। অথচ প্রশ্ন এসেছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস থেকে। বিশেষ করে গণিত ও জীববিজ্ঞাস বিষয়ে অর্ধেকের মতো প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরে থেকে করা হয়েছে। আমাদের আগেভাগে জানানো উচিত ছিল যে ফুল সিলেবাসে পরীক্ষা হবে।’
নীলফামারী থেকে আসা রায়হানে জান্নাত বলেন, ‘জীববিজ্ঞান ও গণিত কঠিন হয়েছে। কেননা ১৫ থেকে ১৮টি প্রশ্ন করা হয়েছে সিলেবাসের বাইরে থেকে।’
রংপুর কালেক্টরেট কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, ‘গণিত বিষয়ের প্রায় সব প্রশ্নই এসেছে সিলেবাসের বাইরে থেকে। এছাড়া রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞানের বেশকিছু প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরে থেকে এসেছে।’
এদিকে প্রশ্নপত্রের প্রিন্ট ও ছাপা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র সরকার। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘আজ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলো। প্রশ্নপত্রের গেটআপ দেখে আমি পুরোপুরি হতাশ। আমার চোখের আন্দাজ ৮-৯ ফন্ট সাইজ, ১ স্পেস, ০.২ মার্জিন, উত্তরের অপশনগুলো (এ থেকে ডি) পাশাপাশি দেওয়া। প্রশ্নপত্রের কোথাও তিল পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নেই। আবার পদার্থ, গণিত, রসায়ন রাফ করার জন্য কোনো আলাদা কাগজও দেয়া হয়নি। আমার আশঙ্কা অনেক পরীক্ষার্থী বিভিন্নরকম ভুল করেছে শুধু এরকম একটা ঘিঞ্জি প্রশ্নপত্রের কারণে। একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নপত্রের গেটআপটাও আজ আমরা আপটু দ্য মার্ক করতে পারি না?! ছি!’
তিনি আরো লিখেন, ‘যেখানে ভর্তি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার সব খরচ বহন করে, সেখানে কার স্বার্থে এই কৃচ্ছ্রসাধন? নিশ্চয়ই আমার/আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের। কাকে কী বলবো, নিজেকেই ধিক্কার জানাই!’
প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সম্পর্কে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা বোর্ড থেকে যে সিলেবাস পেয়েছি সে অনুযায়ী প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রশ্নের মডারেশনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারাও সেভাবে প্রশ্ন সাজিয়েছেন। তারপরও কারও অভিযোগ থাকলে আমাদের লিখিত দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন বোর্ডের সিলেবাসের বাইরে থেকে হয়েছে লিখে জানাতে হবে।’
ফল কবে?
খাতা মূল্যায়নের জন্য ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় পাবে টেকনিক্যাল কমিটি। ৩ আগস্টের মধ্যে ফল তৈরি করে কোর কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। এরপর কোর কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ফল প্রকাশ করা হবে।
ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি সূত্রে এসব জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার বলেন, ‘আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক ইউনিটের ফল প্রকাশ করব। ফল তৈরির জন্য আমাদের ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আশা করছি এর আগেই ফল তৈরির কাজ শেষ হবে। এরপর গুচ্ছের মূল কমিটি ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশ করা হবে। রোববার থেকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে।’
আরেক কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীকেও জবি কেন্দ্রে পরীক্ষার সুযোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধীনে শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকার ৮টি কেন্দ্রে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল ৯টা থেকেই কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ১১টায় কেন্দ্রে প্রবেশের নিয়ম থাকলেও যানজটের কথা চিন্তা করে পরীক্ষার্থীদের আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়।
তবে অন্যান্য সেন্টারের অনেকেই না বুঝে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারে পরীক্ষা দিতে চলে আসায় তাদেরকেও পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়েছে।