প্রায় তিন যুগ পর সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী (রাকসু), হল ও সিনেট নির্বাচন। যাতে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারায় নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদও দিচ্ছেন অনেকে শিক্ষার্থী ভোটাররা।
শিক্ষার্থীরা বলছে, দশকের পর দশক ধরে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্বে ৩৫ বছর ঝুলেছিল রাকসু নির্বাচন। ফলাফল যেটাই হোক, এ নির্বাচন আগামীতে ইতিবাচক রাজনীতি ও শিক্ষার্থী অধিকার বাস্তবায়নে পথ দেখাবে বলেও মনে করছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয়েছে রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনে ৪৩ পদে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলে ৯১৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে লড়ছে ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক পরিষদ মিলে ১১টি প্যানেল। মোট ভেটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রায় ৬১ ও নারী ৩৯ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটারদের কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩টি, হল সংসদে ১৫টি এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে পাঁচটি পদ মিলিয়ে ৪৩টি ভোট দিতে হবে। এসব ভোট দিতে ভোটারের জন্য বরাদ্দ থাকছে ১০ মিনিট অর্থাৎ প্রতিটি ভোট দিতে গড়ে প্রায় ১৪ সেকেন্ড করে সময় পাবেন ভোটাররা। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। ১৭ কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে চলছে ভোটগ্রহণ।
সতেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন। এখানে শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ও মতিহার হল হলের শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্র। এর মধ্যে শেরে বাংলা কেন্দ্রর মোট ভোটার ১ হাজার ৮৭১ জন। তাদের ভোটগ্রহণে রয়েছে ৬০টি বুথ। অন্যদিকে মতিহার হল কেন্দ্রে মোট ভোটার ৯৯৩ জন। বুথ রয়েছে ৪০টি।
ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিতরে প্রবেশ করতে কয়েক দফা চেকিংয়ে পড়তে হচ্ছে। বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা ভোটারদের আইডি ও চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছেন। এরপর মোবাইলসহ অন্য কোনো ডিভাইস আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে স্ক্যান করা হচ্ছে। এরপর কেন্দ্রের ভিদরে প্রবেশ করতে পারছেন ভোটাররা। পর্যাপ্ত বুথ ও জায়গা প্রসারিত হওয়ায় দ্রুত ভোট দিতে পারছেন ভোটাররা।
ভোট দিয়ে বের হয়ে শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, "কোনো জটিলতা ছাড়াই ভোট দিতে পারছি। সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিনিট লাগছে। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। পাশাপাশি অমুচনীয় কালীয় দেওযা হচ্ছে।"
এই শিক্ষার্থী বলেন, "অতীতে আমাদের অনেক বড় ভাইয়ের ভোট দিতে পারেননি। সে অনুযায়ী আমরা ভাগ্যবানই বলতে পারি। আমরা চাই, যারাই নির্বাচনে জয় পাক, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে যেন কাজ করে। অসুস্থ রাজনীতির বদলে সুস্থ রাজনীতি দেখতে চাই আমরা।"
শেরে বাংলা হলের ভিপি প্রার্থী রানা হোসেন আমার দেশকে বলেন, "এখন পর্যন্ত ভেটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। আনন্দ, উচ্ছ্বাস নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এভাবে শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলুক এটাই চাই।"
জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে ১৩৩ নম্বর কক্ষে চলছে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ভোটগ্রহণ। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৪৪৬ জন। সকাল ১০টার দিকে এই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
এ সময় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন আমার দেশকে বলেন, "যেহেতু ৩৫ বছর পর ভোট, তাই সবার মাঝে আনন্দটাও একটু বেশি। প্রার্থী বাছাইয়ে প্যানেলের চেয়ে যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও অনিয়ম করবেরা এমন প্রার্থীদের বেছে নেবে শিক্ষার্থীরা।"
একই ভবনের ১০১ নম্বর কক্ষে চলছে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ভোটগ্রহণ। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৩০০ জন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৫০টির মতো। এ কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড.আল- আমিন সরকার আমার দেশকে বলেন, "এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতকর ঘটনা ঘটনা কিংবা কোনো ধরনের জটিলতার অভিযোগ পাওয়া যায়রি। শিক্ষার্থীরা আসছেন, ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।"