বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লাঞ্ছিত স্বপন কুমার অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন বাধ্য হয়ে

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২২ ১৬:২৬

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে স্বপন কুমার অনীহা দেখালেও আইনি বাধ্যবাধকতায় তিনি পদটি নিতে বাধ্য হন। এরপর বেশ কয়েকবার তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে সরে যেতে পারেননি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কলেজটিতে শিক্ষকদের মাঝে রয়েছে নানান সমীকরণ। 

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার পেছনে কলেজ শিক্ষকদের একটি অংশেরও উসকানি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বপন কুমার বিশ্বাসের আগে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু। তবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কারণে প্রায় দেড় বছর আগে আক্তারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় স্বপন কুমারকে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে স্বপন কুমার অনীহা দেখালেও আইনি বাধ্যবাধকতায় তিনি পদটি নিতে বাধ্য হন। এরপর বেশ কয়েকবার তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে সরে যেতে পারেননি।

কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বপন কুমার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে পরবর্তী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে আক্তার হোসেনের সামনে আইনি কোনো বাধা থাকবে না। আবার আক্তারেরও রয়েছে বিরোধী পক্ষ। কলেজে গত ১৮ জুনের ঘটনা জটিল হওয়ার পেছনে এসব হিসাব-নিকাশের ভূমিকা থাকতে পারে।

ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল যুবক

এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। এই কমিটিতে নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে আছেন নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান।

আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ঘুম ভাঙল প্রশাসনের, হারাচ্ছেন না পদ

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তার পেছনে কলেজে অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়গুলোও অনুসন্ধান করছে এই তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্য নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে শিক্ষকদের কেউ জড়িত কি না আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আমাদের এ রকম মনে হচ্ছে।

‘এত শিক্ষক থাকতে যখন ঘটনাটি অল্পের মধ্যে ছিল, তখন বিষয়টি সবাই মিলে চেষ্টা করলে সমাধান করা যেত। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ বিষয়টি জটিল করার দিকে নিয়ে এটা করেছি কি না, সে বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানের মধ্যে আছে। আমি বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘তদন্তে এমন কিছু এখনও প্রমাণ করতে পারিনি। তবে যারা আমাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন, তারা বলছেন অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলা থাকতে পারে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘কলেজে বেশ কয়েক বছর ধরে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা আছে। স্বপন কুমারের আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন আক্তার হোসেন টিংকু নামের আরেক শিক্ষক। পরে তাকে সরিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

‘আমরা শুনেছি, এদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ থাকতে পারে। তবে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলেনি। হয়তো তাদের অন্তরে বিরোধিতা ছিল। প্রকাশ্যে কিছু ছিল না।’

আরও পড়ুন: পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা কীভাবে?

আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে স্বপন কুমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন গত বছরের ২৭ এপ্রিল। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেন জুনিয়র ছিলেন, তার ওপরে ছিলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা আছে, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তাকে (আক্তার) সরিয়ে নতুন একজনকে অধ্যক্ষ করা হয়েছিল।’

আইনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করতে হবে।’

শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। গ্রাফিক্স মামুন হোসাইন/নিউজবাংলা

আক্তার হোসেনের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে অনীহা ছিল স্বপন কুমারের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী। তবে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই পদটি গ্রহণ করতে হয় স্বপন কুমারকে।

অচীন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেনের আগে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন রওশান আলী। তিনি দুর্নীতির দায়ে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য (নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক) কলেজের সভাপতি ছিলেন, তিনি আক্তার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। আক্তার কয়েক বছর দায়িত্বে ছিলেন।

‘পরে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম। তিনি পর্যালোচনা করে দেখেন, নীতিমালায় আছে অধ্যক্ষ না থাকলে টপ মোস্ট সিনিয়র শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন। এরপর তিনি নীতিমালা অনুসারে স্বপনকে দায়িত্ব নিতে বলেন।

‘তিনি (স্বপন কুমার) রাজি ছিলেন না। তবে নীতিমালায় আছে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া টপ মোস্ট সিনিয়র দায়িত্ব না নিতে চাইলে তার শাস্তি হবে। তাই তিনি দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন।’

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু

নীতিমালার এই দিকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদারও নিশ্চিত করেছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (পরিচালনা পর্ষদ) তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে ভুক্তভোগী শিক্ষক মাউশিতে অভিযোগ করতে পারেন। এরপর মাউশি থেকে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেয়া হয়।’

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তীর দাবি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তন নিয়ে স্বপন কুমারের সঙ্গে আক্তার হোসেনের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে আগে থেকে দ্বন্দ্ব আছে। কলেজে বিভিন্ন জটিলতার কারণে স্বপন কুমার এরই মধ্যে তিনবার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে আইনি বাধ্যবাধকতায় তিনি পদটি ছাড়তে পারেননি।

অচীন চক্রবর্তী বলেন, ‘স্বপন বাবু খুব ভালো মানুষ। সে কারও সাত-পাঁচে জড়ায় না, কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বও বাধায় না। সে আগেও তিনবার আমাকে বলেছে, এই ঝামেলার জায়গায় থাকতে চায় না। বলেছে তার শরীর ভালো নেই।’

ঘটনার দিন প্রভাবশালী শিক্ষকরা ছিলেন নিশ্চুপ

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় গত ১৭ জুন রাতে ফেসবুকে নূপুরকে প্রশংসা করে একটি পোস্ট দেন। পরদিন রাহুলের বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে যান একদল শিক্ষার্থী। কলেজের চারপাশ ঘিরে জড়ো হয় হাজারো বিক্ষুব্ধ মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে পরামর্শের জন্য স্বপন কুমার কলেজের কয়েক শিক্ষককে ডেকে নিলেও তারা নিশ্চিপ ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ছাত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

আরও পড়ুন: অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা ওসির সামনেই

এ বিষয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে কিছু ছাত্র আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি তিনজন শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তাদের মধ্যে ছিলেন কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম, পরিচালনা পরিষদের আরেক সদস্য ও কৃষি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক কাজী তাজমুল ইসলাম। বাকি আরেক জন হলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু।’

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

স্বপন কুমার বলেন, ‘কলেজের যেকোনো অঘটন ঘটলে আমি সব থেকে আগে এই তিন শিক্ষককে জানাই। প্রতিবারের মতো সেদিনও একইভাবে তাদের জানালাম।

‘স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেয়ার বিষয় নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তবে তারা নীরব ছিলেন। কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরই মধ্যে কলেজে গুজব ছড়িয়ে পড়ে আমি ওই ছাত্রকে সাপোর্ট করছি। তখন কিছু ছাত্র কলেজে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।’

কলেজের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও।

আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ছাত্রের বিরুদ্ধে এজাহারের ‘লেখক’ পুলিশ

তিনি বলেন, ‘যেকোনো ক্লাব, স্কুল, কলেজ, বাজার, রাজনীতিক যা বলেন সবখানে পক্ষ-বিপক্ষ আছে। সেই রকম একটি বিষয় আমাদের কলজেও আছে। কলেজের কোনো বিষয় নিয়ে স্বপন বাবুর সঙ্গে আক্তার হোসেনের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে আক্তার হোসেনের হয়তো উদ্দেশ্য ছিল স্বপন বাবু সরে গেলে সে প্রিন্সিপাল হতে পারবে। এটা হয়তো আশা।

‘তবে কলেজের ১৮ জুনের ঘটনাটি এলাকার জামায়াত-বিএনপির লোকজনই ঘটিয়েছে। তারা চারপাশের পাঁচ থেকে সাতটি গ্রাম থেকে নছিমন ভরে ভরে লোক এনেছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, জামায়াত-বিএনপিরাই এসব করেছে। তারা হ্যান্ড মাইক নিয়ে এসে জামায়াত স্টাইলে এসব করেছে।’

কলেজের ভেতর থেকেই বাইরে গুজব ছড়ানো হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন অচীন চক্রবর্তী।

কলেজের কোনো শিক্ষক জড়িত থাকতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘থাকতে পারে মেবি। এটা ইন্টারনালি ইনফর্ম করে দিছে। এখন সারা দেশে জামায়াত-বিএনপি খুবই সোচ্চার। টেলিফোন পেলেই চলে আসে।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

অচীন চক্রবর্তীর দাবি, স্বপন কামারের সঙ্গে কলেজের কোনো শিক্ষকের দ্বন্দ্ব নেই। তবে শিক্ষক আক্তার হোসেনের সঙ্গে শেখ আকিদুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষকের দ্বন্দ্ব আছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এই শেখ আকিদুলকেও পরামর্শের জন্য ডেকেছিলেন স্বপন কুমার।

শিক্ষক দ্বন্দ্বে সামনে আসছে আক্তার ও আকিদুলের নাম

স্বপন কুমারের আগে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হকের সমর্থন ছিল তার সঙ্গে।

আক্তার হোসেনের দাবি, ১৮ জুনের ঘটনার পরদিন কলেজে এক সমাবেশে যোগ দিয়ে এমপি কবিরুল তাকে আবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার প্রস্তাব করেন।

আক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরের দিন স্থানীয় এমপি এসে আমাকে নতুন করে দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন। তবে আমি রাজি হইনি। তিনি (এমপি কবিরুল) বলেছিলেন, এখানে মুসলমান লেবেলের একজন কড়া শিক্ষক দিতে হবে, যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই কথা বলে তিনি আমার নামটা বলে ফেলেছেন।’

শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনায় তার নাম আলোচিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, ‘এমপি সবার সামনে কথাটি বলায় অনেকে এসব ধারণা করছেন। তবে বাস্তবে আমি এর সঙ্গে জড়িত নই।’

আক্তার পাল্টা অভিযোগ তুলছেন আরেক শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ভাবাপন্ন যারা আছেন, বিশেষ করে আকিদুল সাহেব। উনি মূলত আমার বিরোধিতা করছেন। তদন্ত কমিটির কাছে এভাবে বলেছেন যে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য সেদিনের ঘটনায় আমার ভূমিকা আছে।’

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ আকিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে আক্তার হোসেনের কোনো ঝামেলা নেই। মাঝে মাঝে কলেজে টুকটাক বিষয় নিয়ে মতের অমিল হতে পারে। ওই দিনের ঘটনায় কোনো শিক্ষকের উসকানি আছে বলে আমার মনে হয় না। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই অনেক কিছু বোঝা যাবে।’

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম

দলীয় কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি করেন আকিদুল।

অন্যদিকে আক্তার হোসেনকে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি গত রোববার নিউজবাংলার কাছে অস্বীকার করেন নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক।

তবে পরে আবারও এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরদিনই কলেজে একটি শান্তিশৃঙ্খলার মিটিং হয়েছিল। সেখানে এলাকার উত্তপ্ত মানুষ বিভিন্ন রকম প্রস্তাব দিয়েছিল, শান্ত করার জন্য তাদের বিভিন্ন প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলাম।

‘তবে অধ্যক্ষ স্বপনকে দায়িত্ব থেকে সরানোর কোনো উদ্যোগ আমরা নেব না।’

কলেজে কর্মচারী নিয়োগ নিয়েও বিরোধ

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে সৃষ্ট পাঁচটি পদের জন্য গত মার্চে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তবে নিয়োগ পরীক্ষার দুই দিন আগে কার্যক্রম স্থগিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অচীন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই নিয়োগগুলো এমপিওভুক্ত না। গ্রামের লোকদের দলাদলির কারণে নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষকে জোর করে কেউ কলেজে চাকরি দিতে চেয়েছিল।

‘বিষয়টি আমি এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। তাহলে আমি গ্রামের মানুষের শত্রু হয়ে যাব। শহরের কলেজ হলে এ সমস্যা হতো না।’

জটিলতার কিছুটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয়কে নিয়োগের চাপ ছিল। তাই বন্ধ করা হয়েছিল। তিনি বারবার অনুরোধ করতেছিলেন। তারা আবার দ্বন্দ্ব করতেছিলেন। এই কারণে এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে কলেজের ১৮ জুনের ঘটনার সঙ্গে ওই নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর