চাকরির বাজারে দক্ষ জনবল চায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। আর তাই শিক্ষাজীবনেই ভবিষ্যতের পেশাজীবনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করার আগেই কর্মজীবনে কাজ করার মতো দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। তাহলে কাটবে চাকরির অনিশ্চয়তা।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (সিইউবি) ক্যাম্পাসে শনিবার আয়োজিত ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া ডায়লগ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কম্পিউটার শিক্ষার উন্নতির ওপর জোর দিয়ে সিইউবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে অংশ নেয়া আইটি ইন্ডাস্ট্রি লিডার ও অ্যাকাডেমিক এক্সপার্টদের ডায়লগে ছাত্রাবস্থাতেই দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক এক্সপার্টদের পক্ষ থেকে কি-নোট উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক সোহেল রহমান এবং ইন্ডাস্ট্রি লিডারদের পক্ষে কি-নোট দেন ব্রেইনস্টেশন ২৩-এর কো-ফাউন্ডার ও সিইও রাইসুল কবির।
ডায়লগে সেশন চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
তিনি জানান, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।
ড. নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘কীভাবে স্টার্টআপ ফান্ডের জন্য আবেদন করতে হয়, ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিংয়ের জন্য একটি পরামর্শ এজেন্সি খুলতে হয় সে সম্পর্কে হাতেকলমে শিক্ষার ব্যাপারে আমরা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করছি। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী প্রজন্মের স্মার্ট উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘৩৫টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে আমাদের নিবেদিত আইটি টিম আছে, যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে পারেন এবং চাকরি নিশ্চিত করতে পারেন। আমরা মনে করি, বাজারে থাকা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিল্পগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এখনই সময়।’
ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিডার ও অ্যাকাডেমিক এক্সপার্টদের যৌথভাবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিইউবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকরা সাইবার-নিরাপত্তা, স্মার্ট অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স, স্মার্ট কম্পিউটার, বিজি ডেটা, ব্লক চেইন, আইওটি, ক্লাউড স্টোরেজ এবং অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আমি সিএসই বিভাগ থেকে স্নাতকদের জন্য অত্যন্ত গর্বিত, যারা বর্তমানে বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানিতে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে কাজ করছেন।’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক অনুষ্ঠানে কো-চেয়ার ছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রযুক্তি উন্নত করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্র বাড়াতে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের অক্লান্ত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’
ডেটাসফট সিস্টেম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এম. মঞ্জুর মাহমুদ প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন। অ্যাকাডেমিয়া ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সাপ্লাই এবং ডিমান্ড গ্যাপ কমিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে যুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ল্যাব তৈরি করতে পারি, ইনোভেশন হাব তৈরি করতে পারি। একসঙ্গে স্টার্টআপের জন্য কাজ করতে পারি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবদুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মঈনউদ্দীন মোনেম এবং কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ ও স্কুল অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক এএসএম সিরাজুল হক।
সেমিনার পরিচালনা করেন স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিন এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আক্তার হোসেন।
প্যানেল আলোচনাকারীদের মধ্যে ছিলেন হুয়াওয়ে টেকনোলজিস বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড অফ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন কার্ল ইউ ইং, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাকাডেমিকসের সভাপতি এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমবিএ এবং এইচআরএম প্রোগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক ড. ফরিদ এ সোবহানী, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি তপন কান্তি সরকার, ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের চেয়ারপারসন ও সিইও এবং বেসিসের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা এ. রহমান।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইএমসিটি বিভাগের পরিচালক মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়া, টেকসলিউশনসের সিইও নাজনীন নাহার, অরেঞ্জবিডির ডিরেক্টর এবং চিফ অপারেটিং অফিসার হাফেজ আহমেদ এবং ব্যাটারি লো ইন্টারেক্টিভ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মিনহাজ-উস-সালেকিন ফাহমেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।