চাকরিতে যোগ দেয়ার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থান নিয়েছেন বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্তরা। উপাচার্যের বাসভবনের সামনেই তারা রাত কাটান। বুধবার বেলা ১২টার সময়ও তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
সদ্য বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহানের মেয়াদের শেষ দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩৭ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেন তিনি। সে দিনই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন- ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য আবদুস সোবহানের নিয়োগ ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখার আদেশ দেয়। সে আদেশকেও তোয়াক্কা না করেই শেষ দিনে নিয়োগ দেন আবদুস সোবহান।
নিয়োগ পেলেও তাদের কাউকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় যোগদানের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, উপাচার্য বাসবভবন, প্রশাসন ভবনে তালাসহ নানা কর্মসূচি করছেন তারা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেট হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য সেখানে অবস্থান নেন বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্তরা।
আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে সভা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে নিয়োগপ্রাপ্তরা সারারাত জেগে সেখানেই অবস্থান করেন। তারা ঘোষণা দেন, পদায়ন না করা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করবেন।
এর আগে কর্মস্থলে পদায়নের দাবিতে গত শনিবার থেকে প্রশাসন ভবন ও উপচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন তারা। ফলে শনিবার ফাইনান্স কমিটির সভা স্থগিত হয়ে যায়।
গত রোববার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেন। তবে সিন্ডিকেট ঠেকাতে নিয়োগ পাওয়া ৩০-৩৫ জন মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর ও প্রক্টর লিয়াকত আলী। তবে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকে।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সাংবাদিকদের জানান, নিয়োগপ্রাপ্তদের বাধার মুখে তিনি সিন্ডিকেট স্থগিত করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘চাকরিপ্রাপ্তদের সঙ্গে সোমবার আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। ওই মিটিং এ তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা সিন্ডিকেট সভাতে বাধা দেবে না, তবে এফসি করতে দিবে না।
‘তাদের আশ্বাসে আজকে সন্ধ্যা ৭টার পর সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট করতে গেলে তারা বাধা দেয়। আর প্রক্টরসহ সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয়। তাই সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করেছি।’
ভিসি আরও বলেন, ‘তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুতি আছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া তাদের যোগদান করানোর ক্ষমতা আমার নেই।’
নিয়োগ পাওয়া রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ মে আমাদেরকে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহান নিয়োগ দিয়ে গেছেন। এখনও আমাদেরকে কর্মস্থলে যোগদান করানো হয়নি। এ বিষয়ে একটা সমাধানের জন্য তখন থেকে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি, আন্দোলন করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে চারভাগের একভাগ কাজও করিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।'
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। মিটিং এ আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে আমাদের বিষয়ে শিগগির সমাধান হবে। কিন্তু এরপরেই প্রশাসন থেকে আমাদের পদায়নের বিরোধিতা করা হয়েছে।
‘আমরা জানতে পারি যে, এই সিন্ডিকেটে আমাদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিলের বিষয়ে কথা বলা হবে। তাই আমরা ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।’