বিতর্ক থেকে যেন সরতেই পারেন না রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
এবার তিনি বিতর্ক তৈরি করেছেন রাত সাড়ে তিনটায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের পলিটিক্যাল থট কোর্সের ক্লাস নেবেন বলে জানান।
এরপর রাত ৩টা ২০ মিনিটে গুগল মিটে ক্লাস শুরু করেন। ক্লাস শেষ হয় ৩টা ৫৫ মিনিটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষার্থীরা জানান, শুরুতে ক্লাসে ২৮ জন শিক্ষার্থী জয়েন করলেও শেষ পর্যন্ত ১২ জন ছিলেন। গভীর রাতে ক্লাস হওয়ায় অনেকেই থাকতে পারেননি।
এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে ও বাইরে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
গভীর রাতে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধ্যরাতে ক্লাস নেয়া কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। এটা নিয়ে ভাবতেও লজ্জা লাগে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কলিমউল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
১২ বিভাগের কোর্স পড়াতেন উপাচার্য:
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি কখনো ক্যাম্পাসে যাননি। অথচ ২০১৮ সাল থেকে প্রতি শিক্ষাবছরে তার নামে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কিছু কোর্স বরাদ্দ ছিল। তিনি দুইটি অনুষদের ডিন, একটি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান, দুটি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
এখনও তিনি অন্তত ১২টি বিভাগের বিভিন্ন কোর্স পড়ানোর দায়িত্বে আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, একজন শিক্ষকের জন্য নিয়মিত ১০টি কোর্স নেয়াই কঠিন। কারণ প্রতিটি কোর্সে কমপক্ষে ৪০টি ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল ও মিডটার্ম পরীক্ষা নেয়াসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইত্যাদি করতে হয়। অথচ তিনি উপাচার্য পদে থেকে দিনের পর দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেও এই বিপুল সংখ্যক কোর্স নিচ্ছেন। বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
কর্মচারী দিয়ে পরীক্ষা নেন উপাচার্য:
কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন শেষ নেই। তিনি দুই-একটি ক্লাস নিলেও পরীক্ষা নিয়েছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়ে। কোনো কোনো কোর্সে একটি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করেছেন। পরে শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশ উপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষেই ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছেন। সব সেমিস্টারেই তাকে অনুপস্থিত দেখানো হলেও কলিমুল্লাহর কোর্সে তাকে উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
উপস্থিতি, ইনকোর্স, টিউটোরিয়াল ও মিডটার্মে তাকে নম্বরও দেয়া হয়েছে। এমনকি মিডটার্মের লিখিত পরীক্ষায় ২৫ এ পেয়েছেন ২৭।
এ ছাড়া পরপর দুইবার ফেল করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে উপাচার্য পরীক্ষার ফরম পূরণ করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
একটি ক্লাস নিয়েই কোর্স শেষ করেছেন উপাচার্য:
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-২০১৬ সেশনের ২য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারে এমন ঘটনা ঘটেছে। কলিমুল্লাহ নিয়েছেন মাত্র একটি ক্লাস যা নেয়ে হয় প্রশাসন ভবনের সিন্ডিকেট রুমে রাত ১১টায়। তবে একটি ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ।
আরেকটি কোর্সে নিয়েছেন তিনটি ক্লাস।
রাষ্ট্রপতির নিয়োগাদেশ অনুযায়ী কলিমউল্লাহর উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ মে। যদিও তার দাবি, তিনি যোগ দিয়েছেন ২০১৭ সালের ১৪ জুন। তাই তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১৩ জুন।
তবে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদকে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নিয়োগ কার্যকর হবে আগামী ১৪ জুন থেকে।