মার! মার! ধর! ধর! গুলি কর! গুলি কর! গ্রেনেড মার! তাড়াতাড়ি গুলি কর! মাইরা ফালা! মোবাইল ফোনের গেমসের এসব কথা এখন সিরাজগঞ্জ শহর পেরিয়ে গ্রামের বাজার, ফাঁকা জায়গা, রাস্তা ও অলিগলিতে।
করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সুযোগে দলবেঁধে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমসে।
তারা মোবাইলে ভিডিও গেমসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা।
আজমির হোসেন নামের নবম শ্রেণির ছাত্র নিউজবাংলাকে বলে, ‘গেমস সম্পর্কে কিছু জানতাম না। এখন নিয়মিত ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার নেশা হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে নেট সমস্যায় এ গেমস খেলতে না পারলে মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলার ইচ্ছা হয়। ফ্রি ফায়ার গেমস যে একবার খেলবে, সে আর ছাড়তে পারবে না।’
শিক্ষার্থীরা জানায়, ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে ডায়মন্ড কিনতে হয়। ১০০ ডায়মন্ডের দাম ৮০ টাকা। ১০৬০ ডায়মন্ডের দাম ৭৯০ টাকা। মেম্বারশিপ সপ্তাহে ১৭০ টাকা, মাসিক ৫১০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ না করলে কিছুই হয় না।
তারা জাানায়, গেমটিতে প্রথমে কোনো খরচ ছিল না, কিন্তু পুরোপুরি মনোযোগী হলে এমন কিছু জিনিস আছে, যা না কিনলেই নয়। যেমন, অলকের দাম ৪০০ টাকা, একজন খেলোয়াড়ের জার্সি ৩০০ টাকা, নতুন ইভেন্ট এলেই ২০০০ এর নিচে যাওয়া যায় না। সম্পূর্ণ ড্রেস কিনতে লাগে ১২০০ টাকা আর রেগুলার ইভেন্টের কথা তো বলাই বাহুল্য।
ফ্রি ফায়ার গেমকে যেকোনো নেশার চেয়ে ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেছে সিরাজগঞ্জ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল অধিকারি বলেন, ‘এই সমস্যা থেকে সন্তান, ভাই-বোনদের বাঁচাতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তরুণ কবি-সংগঠক হাদিউল হৃদয় বলেন, ‘তাড়াশসহ বিভিন্ন উপজেলায় শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা না থাকায় শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে গেমস খেলার প্রবণতা মহামারি আকার ধারণ করেছে।
‘পাঠাগার থাকা সত্ত্বেও বই পড়া ছেড়ে অনেক শিক্ষার্থীই খেলছে মোবাইল গেমস। এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে বিভিন্ন গ্রামে খেলার মাঠ না থাকায় খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। শিক্ষার্থীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহার না করতে পারে।’
সিরাজগঞ্জ বিএনএসপি চক্ষু হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নাজমুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে এসব গেম খেলা হয়। এতে চোখের কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়। ইদানীং অনেক শিক্ষার্থীকে চোখের রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন না দিলে তারা চোখসহ নানা রোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবে।’